শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

যশোরের আলী ও সিরাজগঞ্জের রিয়াজ হুন্ডি ও চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায় ধনকুব

মিষ্টি ব্যবসায়ী আলীর ধনকুবের হয়ে ওঠার কাহিনীও চমকপ্রদ। হুন্ডি আর চোরাই স্বর্ণের ব্যবসা করেই রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। শুধু আলী নন, চোরাই স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে তার বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে আছেন সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ডিবির যৌথ অভিযানে আলীর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ৬১ কেজি ৫৩৮ গ্রাম ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণবার তার নয় বলে জানান তিনি। আলী জানান, এসব রিয়াজ উদ্দিনের। সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে_ ব্যাংক কর্মচারী থেকে অল্প দিনে কোটিপতি হয়েছেন রিয়াজ। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান হন। নিজ এলাকায় রিয়াজ এক 'রহস্যপুরুষ' হিসেবে পরিচিত। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রিয়াজ ও আলী একই সিন্ডিকেটের সদস্য। 
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের ২৯/১ নম্বর বাসা 'ঠিকানা'র ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণ পাওয়া যায়। যার মোট পরিমাণ আট কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের সৌদি রিয়াল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত টাকা ও বিদেশি মুদ্রা গোনা সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে এক হাজার টাকার বান্ডেল ৩৪৮টি, ৫০০ টাকার বান্ডেল ৩৫৩টি, ১০০ টাকার বান্ডেল ১৪টি ও বাকিগুলো সৌদি রিয়ালের বান্ডেল। এ ছাড়া উদ্ধার করা স্বর্ণের দাম প্রায় ৩০ কোটি টাকা। 
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সমকালকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসার গডফাদার আলী। একাধিক সহযোগীর মাধ্যমে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছিলেন। সহযোগী হিসেবে যাদের নাম আলী জানিয়েছেন তাদেরও মামলায় আসামি করা হবে। তিনটি ধারায় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এই মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি মুদ্রা ও টাকার নম্বর লিখে রাখার জন্য ম্যানুয়ালি তা গোনা হচ্ছে। মইনুল খান আরও বলেন, দুবাই থেকে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের সব বারের ওজন প্রতিটি দশ তোলা। আলীর বাসা থেকে প্রতিটি দশ তোলা ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণবার পাওয়া গেছে। স্বর্ণের সব বার বিদেশি হলোগ্রামযুক্ত। তাছাড়া এর আগে বিভিন্ন সময় কালো কাপড় ও স্কচটেপে যেভাবে চোরাচালানের স্বর্ণ পাওয়া যায়, একই কায়দায় আলীর বাসায় স্বর্ণ ছিল। 
সম্প্রতি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করে। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা মোহাম্মদ আলীর নাম প্রকাশ করেন। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর তখন থেকেই মোহাম্মদ আলীর ওপর নজরদারি শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার শুল্ক গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, মোহাম্মদ আলীর বাসায় টাকা ও স্বর্ণের মজুদ রয়েছে। তারপরই সেখানে অভিযান চালানো হয়। মোহাম্মদ আলী অনেক বছর ধরেই হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গ্রেফতার বাংলাদেশ বিমানের ডিজিএম এমদাদ হোসেন, ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, বিমানের সিডিউল ইনচার্জ তোজাম্মেল হোসেন এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও জানা গেছে। এর সূত্র ধরেই মোহাম্মদ আলী ছোট ছোট চালানে বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার নিয়ে আসতেন। স্বর্ণ এনে তার পল্টনের বাসায় মজুদ করতেন। আলী হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। আলী বিভিন্ন সময় দুবাই যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। বেনামে তার একাধিক পাসপোর্ট থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। উদ্ধার করা বিদেশি মুদ্রা ও টাকা গুনতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত টাকা গোনা সম্পন্ন হয়। টাকা গণনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন সমকালকে বলেন, এত টাকা জীবনে দেখেননি। টাকা গুনতে গুনতে তাদের আঙুল ব্যথা হয়ে গেছে। 
এদিকে আলীর স্বীকারোক্তিতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনের নাম আসায় সন্দেহের তীর এখন তার দিকে। আশির দশকের এক ব্যাংক কর্মচারী রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার বিষয় নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন ও কাহিনী আছে। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে দ্রুত সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে গত ২৯ জানুয়ারির নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। 
জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের হরিণা গ্রামে বিশাল বাগানবাড়ির মালিক রিয়াজ উদ্দিন। ১৯৮৫ সালে জনতা ব্যাংকে ক্লার্ক পদে ঢাকার পল্টন শাখায় তার প্রথম নিয়োগ। এরই মধ্যে বিমানবন্দর ও মতিঝিল শাখায় বদলি হওয়ার সুবাদে তার অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্য হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে নিটিং অ্যান্ড ডাইং ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এ ব্যবসা গুটিয়ে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে 'চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির' মাধ্যমে শহর রক্ষা বাঁধ ও যমুনায় ক্রসবার বাঁধের সংস্কার কাজের সাব-ঠিকাদারি কাজের একাংশের দায়িত্ব নিয়েছেন। দু'তিন বছর আগে ঢাকা থেকে এসে সিরাজগঞ্জে নিয়মিত থাকছেন রিয়াজ উদ্দিন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শহরের দ্বিধানগড়ায় একটি টিনশেড ভবন গড়ে বাস করছেন। এ অঞ্চলে দিন দিন তার রাজনৈতিক আধিপত্যও বাড়ছে। অভিযোগের ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন শুক্রবার বিকেলে সমকালকে বলেন, 'স্বর্ণের মালিক তো দূরের কথা, মোহাম্মদ আলীকেই আমি চিনি না। এটা ষড়যন্ত্র। পাওয়ার লুম কারখানা ছাড়াও টুকটাক ঠিকাদারির সঙ্গে জড়িত আছি। খুব শিগগির সংবাদ সম্মেলনে ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে।' 

যশোরের আলী ও সিরাজগঞ্জের রিয়াজ হুন্ডি ও চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায় ধনকুব

মিষ্টি ব্যবসায়ী আলীর ধনকুবের হয়ে ওঠার কাহিনীও চমকপ্রদ। হুন্ডি আর চোরাই স্বর্ণের ব্যবসা করেই রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। শুধু আলী নন, চোরাই স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে তার বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে আছেন সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ডিবির যৌথ অভিযানে আলীর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ৬১ কেজি ৫৩৮ গ্রাম ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণবার তার নয় বলে জানান তিনি। আলী জানান, এসব রিয়াজ উদ্দিনের। সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে_ ব্যাংক কর্মচারী থেকে অল্প দিনে কোটিপতি হয়েছেন রিয়াজ। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান হন। নিজ এলাকায় রিয়াজ এক 'রহস্যপুরুষ' হিসেবে পরিচিত। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রিয়াজ ও আলী একই সিন্ডিকেটের সদস্য। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের ২৯/১ নম্বর বাসা 'ঠিকানা'র ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণ পাওয়া যায়। যার মোট পরিমাণ আট কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের সৌদি রিয়াল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত টাকা ও বিদেশি মুদ্রা গোনা সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে এক হাজার টাকার বান্ডেল ৩৪৮টি, ৫০০ টাকার বান্ডেল ৩৫৩টি, ১০০ টাকার বান্ডেল ১৪টি ও বাকিগুলো সৌদি রিয়ালের বান্ডেল। এ ছাড়া উদ্ধার করা স্বর্ণের দাম প্রায় ৩০ কোটি টাকা। 

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সমকালকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসার গডফাদার আলী। একাধিক সহযোগীর মাধ্যমে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছিলেন। সহযোগী হিসেবে যাদের নাম আলী জানিয়েছেন তাদেরও মামলায় আসামি করা হবে। তিনটি ধারায় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এই মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি মুদ্রা ও টাকার নম্বর লিখে রাখার জন্য ম্যানুয়ালি তা গোনা হচ্ছে। মইনুল খান আরও বলেন, দুবাই থেকে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের সব বারের ওজন প্রতিটি দশ তোলা। আলীর বাসা থেকে প্রতিটি দশ তোলা ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণবার পাওয়া গেছে। স্বর্ণের সব বার বিদেশি হলোগ্রামযুক্ত। তাছাড়া এর আগে বিভিন্ন সময় কালো কাপড় ও স্কচটেপে যেভাবে চোরাচালানের স্বর্ণ পাওয়া যায়, একই কায়দায় আলীর বাসায় স্বর্ণ ছিল। 

সম্প্রতি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করে। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা মোহাম্মদ আলীর নাম প্রকাশ করেন। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর তখন থেকেই মোহাম্মদ আলীর ওপর নজরদারি শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার শুল্ক গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, মোহাম্মদ আলীর বাসায় টাকা ও স্বর্ণের মজুদ রয়েছে। তারপরই সেখানে অভিযান চালানো হয়। মোহাম্মদ আলী অনেক বছর ধরেই হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গ্রেফতার বাংলাদেশ বিমানের ডিজিএম এমদাদ হোসেন, ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, বিমানের সিডিউল ইনচার্জ তোজাম্মেল হোসেন এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও জানা গেছে। এর সূত্র ধরেই মোহাম্মদ আলী ছোট ছোট চালানে বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার নিয়ে আসতেন। স্বর্ণ এনে তার পল্টনের বাসায় মজুদ করতেন। আলী হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। আলী বিভিন্ন সময় দুবাই যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। বেনামে তার একাধিক পাসপোর্ট থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। উদ্ধার করা বিদেশি মুদ্রা ও টাকা গুনতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত টাকা গোনা সম্পন্ন হয়। টাকা গণনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন সমকালকে বলেন, এত টাকা জীবনে দেখেননি। টাকা গুনতে গুনতে তাদের আঙুল ব্যথা হয়ে গেছে। 

এদিকে আলীর স্বীকারোক্তিতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনের নাম আসায় সন্দেহের তীর এখন তার দিকে। আশির দশকের এক ব্যাংক কর্মচারী রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার বিষয় নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন ও কাহিনী আছে। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে দ্রুত সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে গত ২৯ জানুয়ারির নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। 

জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের হরিণা গ্রামে বিশাল বাগানবাড়ির মালিক রিয়াজ উদ্দিন। ১৯৮৫ সালে জনতা ব্যাংকে ক্লার্ক পদে ঢাকার পল্টন শাখায় তার প্রথম নিয়োগ। এরই মধ্যে বিমানবন্দর ও মতিঝিল শাখায় বদলি হওয়ার সুবাদে তার অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্য হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে নিটিং অ্যান্ড ডাইং ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এ ব্যবসা গুটিয়ে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে 'চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির' মাধ্যমে শহর রক্ষা বাঁধ ও যমুনায় ক্রসবার বাঁধের সংস্কার কাজের সাব-ঠিকাদারি কাজের একাংশের দায়িত্ব নিয়েছেন। দু'তিন বছর আগে ঢাকা থেকে এসে সিরাজগঞ্জে নিয়মিত থাকছেন রিয়াজ উদ্দিন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শহরের দ্বিধানগড়ায় একটি টিনশেড ভবন গড়ে বাস করছেন। এ অঞ্চলে দিন দিন তার রাজনৈতিক আধিপত্যও বাড়ছে। অভিযোগের ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন শুক্রবার বিকেলে সমকালকে বলেন, 'স্বর্ণের মালিক তো দূরের কথা, মোহাম্মদ আলীকেই আমি চিনি না। এটা ষড়যন্ত্র। পাওয়ার লুম কারখানা ছাড়াও টুকটাক ঠিকাদারির সঙ্গে জড়িত আছি। খুব শিগগির সংবাদ সম্মেলনে ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে।' 

শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

সোনা চোরাচালানে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সোনা চোরাচালানের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা, কর্মী, চোরাকারবারিসহ জড়িত ৫০ জনের নাম জেনেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটক চোরাকারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ মাফিয়াদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিমানের কেবিন ক্রুসহ কয়েকজন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ডিবির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনা পাচারের ঘটনা তদন্তে নতুন কিছু তথ্য মিললেও মূল কারবারিদের সন্ধান মেলে না। বরাবরের মতোই আটককৃতরা নিজেদের ‘সহায়তাকারী’ দাবি করে নানা বক্তব্য দিলেও মাফিয়াদের ব্যাপারে একেবারে চুপ। প্রায় সবারই দাবি, মূল কারবারিদের তারা চেনে না। টাকার বিনিময়ে তারা বিভিন্ন জনের হয়ে শুধু কাজ করে দেয়।
তবে এবারের ঘটনা অনেকটাই ব্যতিক্রম। ইতোমধ্যেই যেসব ব্যক্তির নামের তালিকা পাওয়া গেছে, সেখানে বিমানবন্দরে কর্মরত অনেকের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একাধিক নাম রয়েছে। তালিকার বড় অংশ জুড়েই রয়েছে সিভিল এভিয়েশন, বিমান বাংলাদেশের পাইলট, বিমানবালা, ফ্লাইট স্টুয়ার্টসহ নানা স্তরের কর্মকর্তা। বেসরকারি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মীও এই চক্রের সদস্য বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিমানের ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য এখন যাচাই বাছাই চলছে। গত ১২ নভেম্বর বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আফসার রাসেলকে ২ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনাসহ আটক করা হয়। পরে ডিবি পুলিশ তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। রাসেল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সোনা চোরাচালানে বিমান সিন্ডিকেটের তথ্য দেয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বিমানের উর্ধ্বতনদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিমানের পাঁচ জন জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছে তা এক অর্থে বিস্ময়কর। বিমানবন্দরের অধিকাংশ সেক্টরের সঙ্গেই দুর্নীতিবাজ পাচারকারী চক্রের সদস্যদের যোগাযোগ রয়েছে।’
ডিবির পুলিশের উপ কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন ডিজিএমসহ পাঁচ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের তথ্যমতে, বিমানের সব সেক্টরেই চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের হাত রয়েছে। চোরাচালানের সুবিধার্থে এদের মাধ্যমেই বিমানের সিডিউল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’
সূত্র জানায়, গত প্রায় তিন বছর রাজধানীর হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই সোনা চালান ধরা পড়লেও এর সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যেত। বিমানের পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলো। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গত বছর ২৪ জুলাইতে সবচেয়ে বড় স্বর্ণ চালান ১২৪ কেজি স্বর্ণের চালান দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আটক করা হয়। যার দাম ছিল ৫৩ কোটি টাকা। এই ১২৪ কেজি সোনা চোরাচালানে জড়িত ১৪ জনকে শনাক্ত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে ১০ জনই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে কমরত ছিলেন। এতদিন সোনা পাচারে বাহক ধরা পড়ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে। হোতারা বরাবরই ছিল আড়ালে। বিশেষ করে সোনা চোরাচালানে বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি এতদিন অন্তরালেই ছিল। ফলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল সোনা চোরাচালান।
ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন অনেকেই সোনা চোরাচালানে জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া মুশকিল। তবে নানা তথ্যসূত্রে ন্যূনতম ২০ জনকে চূড়ান্ত সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ধরনের সন্দেহভাজনদের ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় জড়িত কয়েকজনও সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। আলামিন মানি এক্সচেঞ্জ, এমরান মানি একচেঞ্জ, আব্বাস মানি এক্সচেঞ্জের কর্ণধাররা এ চোরাচালান ঘটনায় যুক্ত বলে বিস্তর তথ্য মিলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শফিকুল আজম, মিঠু, হাসান, পিণ্টু , লিটন ও শাহীন নামের ব্যক্তিদের খোঁজা হচ্ছে। আলী হোসেন নামে বাড্ডা এলাকার একজন সাবেক চেয়ারম্যান রয়েছে সোনা চোরাকারবারী চক্রের সামনের কাতারে। আলী হোসেন ও লিটন ২০১২ সালে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। সম্প্রতি তারা জামিনে থেকে বের হয়ে ফের একই কাজ করছে।
গ্রেপ্তারকৃত বিমান কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, চোরাকারবারিদের সহায়তাকারীদের মধ্যে বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পাশাপাশি ১৫ ফ্লাইট স্টুয়ার্ট রয়েছে। কথিত সহায়তাকারীরা প্রতিটি সোনার বার পাচার করতে পারলেই এক হাজার টাকা করে পায়। তবে চোরাকারবারীদের মাঠ পর্যায়ের সহায়তাকারী ক্লিনাররা। বিদেশ থেকে আসা সোনা চোরাচালান নির্বিঘ্নে খালাশ করতে ডিজিএম, ক্যাপ্টেন ও তাদের আস্থাভাজন ফ্লাইট ক্রু, বিমান বালা থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে নিজস্ব বলয়ের স্টাফদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া আছে। তবে মূল কারবারিদের পরিচয় সম্পর্কে ধারণা নেই সহায়তাকারীদের। দেশে-বিদেশে অবস্থান করা মাফিয়ারা পর্দার আড়ালে থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।
গত তিন বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে আকাশপথে দেশে ঢুকেছে, আর তার বেশিরভাগ স্থলপথে পাচার হয়েছে ভারতে। দেশে প্রতি বছর কমপক্ষে এক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার চোরাকারবারিদের সোনা ঢোকে। আর সব স্বর্ণই আসছে দুবাই থেকে। এরপর মালেয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকেও কিছু সোনা দেশীয় চোরাবারিদের মাধ্যমে দেশে আসছে। তবে বিদেশ থেকে আসা সব চোরাই সোনা ভারতে পাচার হয়।
মাফিয়া যারা
গোয়েন্দা তথ্যমতে, সোনা পাচারকারিদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কমপক্ষে ১০ জন মাফিয়াদের সদস্য ছিল। বর্তমানেও সরকারি দলের পাশাপাশি, বিরোধি দলের অনেকেই সোনা চোরাকারবারির সূত্র ধরে এসব মাফিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা এর আগে হোরোইন পাচারের পাশাপাশি সোনা পাচারকারী মাফিয়া চক্রের সদস্য ছিলেন বলেন গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, দুবাইয়ে সোনা কেনাবেচায় নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কেউ সেখান থেকে যত ইচ্ছা সোনা কিনে স্বদেশে আনতে পারে। দুবাইয়ে শফিউল আজম নামে এক বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে। তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করে বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের সোনা চোরাচালানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন। দুবাই থেকে সোনা বিমানে করে চালান আনার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে বিমান চেয়ারম্যানের ধর্মপুত্র দাবিকারী পলাশ পুরো চোরাচালানের সমন্বয় করতেন। আটককৃতরা একসঙ্গে কাজ করায় জড়িত অনেকেরই নাম প্রকাশ করতে রাজি হচ্ছে না। কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ।
সোনায় টাকার পাহাড়! 
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিসের উপ-মাহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেনের একটি মার্সিডিজ গাড়ি রয়েছে। গুলশানের ডিসিজি মার্কেটে একটি দোকানের পাশাপাশি যমুনা ফিউচার পার্কেও তার আরো একটি দোকান রয়েছে। পান্থপথে তার নিজস্ব বাড়ি। বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ নিজেকে বিমানের বর্তমান চেয়ারম্যানের ‘ধর্মপুত্র’ পরিচয় দিয়ে বিমানবন্দরে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার মাধ্যমে বিমানের ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ, কেবিন ক্রু, ক্যাপ্টেন, বিমানবালা, অফিস স্টাফসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারির সিউিউল নিয়ন্ত্রণ করা হত। এমনি বিমানের কে বা কারা নিয়োগ পাবে, কার প্রমোশন হবে, প্রমোশন আর নিয়োগ পেতে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে। এর মধ্যে সে কত টাকা রাখবে আর উর্ধ্বতনদের কত টাকা দিবে তার মাধ্যমের চক্রের অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি বিমানের টেন্ডারও পলাশই নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর বাইরে বিমানের ‘কাবু’ থেকেও মোটা অংকের কমিশন পেতেন।
চোরাকারবারির মাধ্যমে পলাশ ঢাকার উত্তরা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি বাড়ির মালিক হয়েছেন। বিদেশে তার ফ্ল্যাট রয়েছে। সেই সঙ্গে স্ত্রীকে দিয়েও বিমানবালাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিমানের বেশিরভাগ বিমানবালার সিডিউল নিয়ন্ত্রণ করতেন পলাশের স্ত্রী। আর পরিকল্পনা ও সিডিউল বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ শহীদ বিমানের সব প্রশাসনিক দপ্তরের পাশাপাশি সিভিল এভিয়েশনের উর্ধ্বতনদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি ২০০৫ সালে বিমানে যোগদান করার পর থেকে সোনা চোরাচালান বেড়েছে। তার হাত দিয়ে কোটি কোটি টাকা সবকিছু ম্যানেজ করতে লেনদেন হত। এর পাশাপাশি শিডিউলিং ম্যানেরজার তোজাম্মেল হোসেন পলাশের নির্দেশমত বিমানের সিডিউল নিয়ন্ত্রণ করতেন। গ্রেপ্তার হওয়া উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদের মাধ্যমে চোরাকারবারি চক্রের সঙ্গে ১০/১২টি চক্রের সম্পর্ক রয়েছে। হারুন এসব মানি এক্সচেঞ্জ চক্রের নিয়ন্ত্রক। মানি এক্সচেঞ্জ মালিকদের সব সবধরনের অর্থ লেনদেন তার মাধ্যমে হত।

পুরো বাসা যেন টাকা আর স্বর্ণের 'খনি'!

পল্টনে ৬৮ কেজি স্বর্ণ ও ৪ বস্তা মুদ্রা উদ্ধারখাটের নিচে বস্তায় বস্তায় টাকা ও রিয়াল। জাজিমের ভেতরও টাকার বান্ডেল। আলমারি আর কাঠের তৈরি নকল ছাদের ওপর শতশত স্বর্ণের বার। পুরো বাসা যেন টাকা আর স্বর্ণের 'খনি'! পল্টনের একটি বাড়িতে অভিযানে ৬৮ কেজি স্বর্ণ ৪ বস্তা টাকা ও সৌদি রিয়াল উদ্ধার- ফোকাস বাংলা

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের ২৯/১ নম্বর বাসা 'ঠিকানা'র ছয়তলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৬৮ কেজি ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণের বার ও চার বস্তা টাকা ও সৌদি রিয়াল উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ওই টাকা ও রিয়াল গুণে শেষ করতে পারেনি উদ্ধারকারীরা। তবে এর পরিমাণ চার কোটিরও বেশি হবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, উদ্ধার করা টাকা-মুদ্রা হুণ্ডির হতে পারে। আর স্বর্ণের বারগুলো চোরাচালানকৃত। উদ্ধার স্বর্ণের দাম প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এ অভিযানে স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িত সন্দেহে ওই ফ্ল্যাটের মালিক মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। নিজেকে আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তির দাবি, সিরাজগঞ্জের এক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বর্ণের বারগুলো তার কাছে পাঠিয়েছেন। উদ্ধার করা টাকা ও সৌদি রিয়াল তার নিজের। যদিও এত টাকা-মুদ্রা ও স্বর্ণের বার কোথা থেকে এলো তার জবাব দিতে পারেননি তিনি। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সমকালকে বলেন, 'গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় অবৈধ স্বর্ণ ও মুদ্রা থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। এরপর ডিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ যৌথভাবে সেখানে অভিযান চালায়। দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল।' চূড়ান্তভাবে শনাক্তের পর বৃহস্পতিবার পুলিশের নিরাপত্তা সহায়তা নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এ অভিযান চালায় বলে জানান তিনি।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও ডিবির সহকারী কমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ সমকালকে জানান, পুরানা পল্টনের ২৯/১ নম্বর বাসার ছয়তলার ৬/এ ফ্ল্যাটে বিকেল ৫টার দিকে শুরু হয় অভিযান। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসার চারটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও মুদ্রা পাওয়া যায়। টাকা ও সৌদি আরবের রিয়াল বান্ডিল করে বস্তায় ভরে রাখা ছিল। বস্তাগুলো পাওয়া যায় বিভিন্ন ঘরের খাটের নিচে। তারা জানান, এর মধ্যে বাংলাদেশি ১০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট ছিল। এছাড়া স্বর্ণের ১৪০টি বার পাওয়া যায় ওয়্যারড্রোবের ভেতরে। এগুলো কালো কাপড়ের তৈরি প্যাকেটে মোড়ানো ছিল। পরে বাসার কাঠের তৈরি নকল ছাদের ওপর থেকে ছোট ছোট আরও কয়েকটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। সেগুলোতে পাওয়া যায় প্রচুর স্বর্ণের বার। প্রাথমিক গণনা অনুযায়ী, উদ্ধার করা স্বর্ণের বারের সংখ্যা ৫২৮টি। এগুলোর প্রতিটির ওজন ১০ তোলা। ঘটনাস্থল এই ফ্ল্যাটসহ ওই ভবনের তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক মোহাম্মদ আলী। সেগুলোতেও অভিযান চালানো হবে বলেও জানান গোয়েন্দারা।
এদিকে, অবৈধ স্বর্ণ ও মুদ্রা উদ্ধারের পর গৃহকর্তা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি স্বর্ণের বারগুলো আপাতত রাখার জন্য তার কাছে পাঠিয়েছেন। এর সঙ্গে তার (মোহাম্মদ আলী) কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি 'সাফা হোমস' নামে একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। পল্টনে তার ব্যবসায়িক কার্যালয়। পাশাপাশি ধানমণ্ডিতে 'আলী সুইটস' নামে তার একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে।গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদ আলী অস্বীকার করলেও তিনি আসলে একজন স্বর্ণ চোরাকারবারী। দেশি-বিদেশি মুদ্রা দিয়ে তিনি স্বর্ণ কিনতেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। টাকা-বিদেশি মুদ্রা তিনি নিজের বলে দাবি করলেও এত টাকা বাসায় বস্তাবন্দি করে রাখার কোনো কারণ দেখাতে পারেননি। উদ্ধার করা মুদ্রার পরিমাণ তিনি চার কোটির কিছু বেশি বলে জানিয়েছেন।অভিযানের পর গণনা শেষ হলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তারা।
অভিযানের সময় ওই বাসায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী রোজিনা বেগম, দুই ছেলে, এক মেয়ে, এক ভাতিজা এবং তিনজন গৃহকর্মী। ছেলে-মেয়েরা জানান, তাদের মা কিছুদিন ধরে অসুস্থ। তার সুস্থতা কামনা করে মাগরিবের নামাজের আগে মিলাদ পড়ানো চলছিল। এর মধ্যেই ডিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা দল অভিযান চালায়। সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন সমকালের কাছে দাবি করেন. মো. আলী নামে কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় নেই। স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যাপারেও তিনি কিছু জানেন না।
রাত সাড়ে ৮টায় পর্যন্ত পুরানা পল্টনের ওই বাসায় অভিযান চলছিল। অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসায় তল্লাশি শেষ হলে মোহাম্মদ আলীর মিষ্টির দোকান ও পল্টনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হবে। সেখানেও স্বর্ণ ও মুদ্রা লুকানো থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়া গেলে তার চক্রের অপর সদস্যদের বাসাতেও তল্লাশি চালানো হবে।

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

শাহজাদপুরে পুলিশ অভিযানে গ্রেপ্তার ৪২
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৪২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার ভোর ৩টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান শামীম ইকবাল জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক নওশাদ ও ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাজী নুরুজ্জামানকে আলোচিত ট্রেন পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ৪জন মাদক ব্যবসায়ী এবং বাকি ৩৫জন বিভিন্ন মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী ও কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীও রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

মোঃ লুৎফুল কবির সোহাগ
সিরাজগঞ্জ
২৩-১২-১৪

ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনার কারনে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচলে বিঘ্নিত
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ঘন কুয়াশায় কারনে মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর পর পর ৮/১০ টি বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও সেতুর ওপর এবং দু’পাশে যান চলাচল বিঘ্নিত ঘটে। পরে সেতু রক্ষনাবেক্ষন চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং সেতুর পশ্চিমপাড় থানা ও ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় সকাল ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।
সেতুর পশ্চিমপাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ঘন কুয়াশার কারনে সেতুর পশ্চিম অংশের ৭ এবং ৯ নং পিলারের কাছে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পর পর ৮/১২ বাস, মুরগী বহনকারী ট্রাক ও প্রাইভেটকার একটির পেছনে আরেকটির সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে সেতুর ওপরে যানবাহন চলাচলে বিঘ্নিত ঘটে। যে কারনে সেতুর উভয় প্রান্তে এর প্রভাবে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি ছিল।
সেতু রক্ষনাবেক্ষনকারী মেটারোলজিক্যাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানী অব চায়না’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী উত্তর লেনে যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যান চলাচলকারী সেতুর দক্ষিন লেনটি দুর্ঘটনার কারনে সকাল  ১০টা পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ যানবাহন সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঘন কুয়াশা ও চালকদের অসাবধনতার কারনে ইদানিং সেতুতে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে।

মোঃ লুৎফুল কবির সোহাগ
সিরাজগঞ্জ
২৩-১২-১৪

সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষনা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। রোববার রাতে সদর থানা ছাত্রলীগের নেতারা জিটিভির’র জেলা প্রতিনিধি সাজিরুল ইসলাম সঞ্চয়কে সভাপতি ও মনিরুল ইসলাম মনিকে সাধারন সম্পাদক করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষনা করেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সোমবার সন্ধ্যায় শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এক জরুরী সভা করা হয়। এ সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে থানা ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি অবাঞ্চিত ঘোষনা করে ছাত্রনেতা রহমত আলীকে সভাপতি ও ইউসূফ আলীকে সাধারন সম্পাদক করে পাল্টা নতুন আরেকটি কমিটি ঘোষনা করা হয়। এ উপলক্ষে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক জুয়েল রানা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৯টি ওর্য়াডের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন।

সভায় বক্তারা বলেন, শিয়ালকোল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির নেতারা ৯টি ওর্য়াডের কমিটি গঠন করেছে। শীঘ্রই ইউনিয়ন কমিটির সন্মেলন হওয়ার কথা। অথচ ইউনিয়নের নেতাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে রোববার রাতে সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক একক সিদ্বান্তে বির্তকিত কমিটি ঘোষনা করেছে। যা সংবিধান ও গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। এতে করে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

মোঃ লুৎফুল

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

কাজীপুরে কীটনাশক ঔষধের গোডাউনে চুরি

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে সিনজেন্টা কোম্পানীর কীটনাশক ঔষধের গোডাউনে চুরি সংঘটিত হয়েছে। চোরেরা এসময় মেসার্স নূর ট্রেডার্সের তত্বাবধানে থাকা প্রায় সাড়ে বার লাখ টাকার নানা ধরণের কীটনাশক ঔষধের প্যাকেট নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিনজেন্টা কোম্পানীর এজেন্ট ব্যবসায়ী নুর মোমিন রানা জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে মেঘাই পুরাতন বাজারে অবস্থিত গোডাউনে সংরক্ষিত কৃষিকাজে ব্যবহৃত ২১ ধরণের কীটনাশক ঔষধের প্যাকেট চুরি গেছে। রাতে স্থানীয়রা গোডাউন সংলগ্ন রাস্তায় একটি ট্রাক থেমে থাকতে দেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে চোরেরা ওই ট্রাকেই ঔষধের প্যাকেটগুলো তুলে নিয়ে গেছে। চুরি হওয়া ঔষধের মূল্য ১২ লাখ ২৯ হাজার পঞ্চাশ টাকা। ঔষধের প্রতিটি প্যাকেটে মেসার্স নুর ট্রেডার্সের সীল দেয়া রয়েছে। সহজেই কেউ এগুলো বিক্রিও করতে পারবে না। বিষয়টি অবগত করার পর সিনজেনটা কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা গোডাউন পরিদর্শন করেছে।

কাজীপুর থানার অফিসার ইন চার্জ মুহাম্মদ আব্দুল জলিল জানান, থানা এলাকার সন্নিকটে এমন চুরির ঘটনা এই ব্যবসা সম্পর্কে জানা শোনা লোক ছাড়া সম্ভব নয়। ঘটনাটি উদ্ঘাটনে চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী থানায় সাধারন ডাইরী করেছে।

রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

বীরমাতা

৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হন সিরাজগঞ্জের বীরাঙ্গনারা। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর তাদের ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও এখনও গেজেট প্রকাশ হয়নি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিবার থেকে বিছিন্ন হওয়া ৩৫ জন বীরাঙ্গনা সিরাজগঞ্জ শহরের ‘নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ আশ্রয় নেন। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ‘সিরাজগঞ্জ নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র।’ এখানেই থাকতেন ওই ৩৫ বীর নারী। কিন্তু কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা আবারও সমাজের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মুখ লুকিয়ে রাখতে শুরু করেন। এ ৩৫ জন বীর নারীর মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৭ জন মারা গেছেন। আর বেঁচে থাকা ১৮ জনের মধ্যে অনেকেই এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন আরিফের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ শহর দখল করে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতে শুরু করে। ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে বর্বরোচিত এ কার্যক্রম। হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতনের সেই দিনগুলোর স্মৃতি মনে হলে এখনও কেঁদে ওঠেন তারা। 

কমলা বেগম, স্বামী মৃত, শুকুর আলী, ভিক্টোরিয়া স্কুল রোড, সিরাজগঞ্জ। যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হামলার ভয়ে তিনি পৈতৃক ভিটা ছেড়ে খোকসাবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ২০ অথবা ২২শে এপ্রিল কতিপয় রাজাকার আশ্রয় কেন্দ্র থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ৩দিন আটকে রেখে তার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। পরে অসুস্থ অবস্থায় সে ছাড়া পেলেও তার স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি। এখনও সে পিতৃগৃহেই বসবাস করছেন। রহিমা বেগম, স্বামী-রিয়াজ উদ্দিন, চককোবদাসপাড়া, সিরাজগঞ্জ। পাকবাহিনীর রোষানল থেকে বাঁচতে অনেকের মতো তিনিও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে একই গ্রামের রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রহিমাকে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেখানে নির্যাতনের একপর্যায়ে তার অনাগত সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। নির্যাতনের সেই ভয়াল স্মৃতি তিনি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন।  

রোকেয়া খাতুন, স্বামী মৃত, আমজাদ হোসেন তালুকদার, সয়াধানগড়া-সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ শহর পাকসেনাদের দখলে চলে যাওয়ার পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে রোকেয়া পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন। স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা বলে বাড়িতে নিয়ে যায়। ১লা মে ওই গ্রাম ঘেরাও করে নির্যাতন চালায় পাকসেনারা এবং রোকেয়াকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। এরপর শহরের ওয়াপদা অফিসে স্থাপিত ক্যাম্পে ১০ দিন আটকে রেখে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। পরে সে ফিরে এলেও স্বামীর বাড়িতে তার আর ঠাঁই হয়নি।  

নূরজাহান বেগম, স্বামী রস্তম সেখ, সয়াধানগড়া-সিরাজগঞ্জ। যুদ্ধকালীন স্বামীর বাড়ি থেকে এলাকার মুখচেনা কয়েকজন রাজাকার তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর শহরের ওয়াপদা ক্যাম্পে নিয়ে তার পরনের কাপড় খুলে লোকজনের সামনেই বিবস্ত্র করা হয়। এরপর নির্যাতন করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাড়িতে ফিরে আসার পর সমাজ তাকে মেনে না নেয়ায় দীর্ঘদিন তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে হয়। 

রাহিলা বেগম, স্বামী আকবর আলী, শিবনাথপুর, শিয়ালকোল-সিরাজগঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র ৬ মাস আগে তার বিয়ে হয়। স্বামী সংসারে তখন সে সুখের স্বপ্ন বিভোর। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে পাকসেনা ও রাজাকাররা তার গ্রামে হানা দেয়। এসময় তার স্বামী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ধরা পড়েন রাহিলা। এরপর টানা ১৭ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ফিরে আসার পর স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি। বর্তমানে সে শহরের এম এ মতিন বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন।   

আয়েশা বেগম, স্বামী কছিম উদ্দিন, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ। স্থানীয় রাজাকাররা অভয় দেয়ায় তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন। এরপর রাজাকাররা পাকসেনাদের গ্রামে ডেকে আনে। আয়শাকে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেখানে টানা ২১ দিন তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। সেই ভয়াল স্মৃতি মনে হলেও এখনও কেঁদে ওঠেন এ বীরাঙ্গনা মাতা। 

সূর্য বেগম, স্বামী হারুনর রশিদ, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি-সিরাজগঞ্জ। তার এক ফুফাতো ভাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। পার্শ্ববর্তী ফকিরতলায় মুক্তিযোদ্ধারা এক স্থানীয় রাজাকারকে মেরে ফেলে। এ কারণে পাকসেনারা ক্ষিপ্ত রাজাকারদের সাথে নিয়ে সূর্য বেগমের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর টানা ২০ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তার ওপর চলে নির্যাতন। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত অসুস্থ সূর্য বেগম এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

এছাড়া শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার আবদুল মতিনের স্ত্রী মাহেলা বেগম, তেলকুপি এলাকার কহিনুর বেগম, যমুনা নদীর ক্লোজারসংলগ্ন শুকুর আলীর স্ত্রী সামিনা বেগম, মতিন সাহেবের ঘাট এলাকার শমসের আলীর স্ত্রী আয়মনা বেগম, পিটিআই, স্কুল এলাকার শামসুল আলমের স্ত্রী সুরাইয়া (ধুলি), সদর উপজেলার কান্দাপাড়া এলাকার হামিদা বেগম ও কালিয়াহরিপুর এলাকার আছিয়া বেগম, কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউপির চানপুর গ্রামের মৃত হরিপদের স্ত্রী রাজুবালা, একই এলাকার জয়গন বেগম, করিমন বেগম ও হাজেরা বেগম এখনও বিচারের আশায় বেঁচে আছেন।  এসব বীরাঙ্গনা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সংগ্রামের স্বীকৃতি সনদ পেয়েছেন। কিন্তু সম্ভ্রম হারিয়েও ৪৪ বছর আমরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। বর্তমান সরকার আমাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও আজও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় আমরা সনদ বা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। দ্রুত সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন দাবি করেছেন এই বীরাঙ্গনা মায়েরা।  
যারা আর নেই
বাহাতন বেগম, স্বামী শুকুর আলী, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ। ১৭ই এপ্রিল পাকসেনারা রাজাকারদের সহায়তায় তার স্বামীকে হত্যা করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভয়ে বাহাতন পালিয়ে গেলেও ৩ মাস পর সে আবার বাড়িতে ফিরে আসলে পাকসেনারা তাকে ধরে ফেলে। এসময় ৮-৯ জন পাকসেনা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। গ্রামের বৃদ্ধ মহিলারা এ দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেও পাকসেনাদের মন গলাতে পারেনি। এরপর পর্যায়ক্রমে তার ছেলে মুসা ও ২ মেয়ে মরিয়ম ও হাসিনা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত বছর তার মৃত্যু হয়। বীরাঙ্গনা আছিয়া খাতুন, স্বামী আবদুল মান্নান, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ। তার স্বামী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ কারণে এলাকার রাজাকাররা আছিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয় রাজাকার বাদশাহ নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখার নামে আছিয়াকে পার্শ্ববর্তী নলিছাপাড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। যুদ্ধ শেষে ফিরে এলেও তার স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি। এরপর থেকে তিনি মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত ৫ই নভেম্বর তিনি মারা যান। এছাড়াও শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার আলাউদ্দিন সেখের স্ত্রী জোসনা বানু, চককোবদাসপাড়ার সূর্য বেগম, একই এলাকার আয়েশা বেগম, ঝর্না বেগম ও কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল এলাকার হাসিনা বেগমসহ চিহিৃত ১৭ জন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থার পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী জানান, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বীরাঙ্গনারা আবারও ঠিকানাবিহীন হয়ে পড়েন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে পুনরায় তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এখনও ১৮ বীরাঙ্গনা নানা সমস্যায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু তাদের দেখার কেউ নেই। গত ৪৪ বছরে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কয়েক জন বীরাঙ্গনা সরকারি ভিজিএফ কর্মসূচির কার্ড পেয়েছেন। আর ২১শে পদকপ্রাপ্ত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তার পদক প্রাপ্তির সাথে পাওয়া ১ লাখ টাকা বীরাঙ্গনাদের উৎসর্গ করেছেন এটাই বীরাঙ্গনাদের জীবনের বড় প্রাপ্তি। সিরাজগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি জানান, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকার জন্য সংগ্রাম করায় তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং তারা সরকারি নানা সুবিধা গ্রহণ করছেন। তেমনি বীরাঙ্গনারও সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও দেশের জন্য তারাও নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, ভোগ করেছেন পাশবিক নির্যাতন। এ অবস্থায় বর্র্তমান সরকার বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়ায় সাধুবাদ জানিয়ে দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধারা।

'৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে' সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের বর্ধিত সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম


স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আগামী ৫ জানুয়ারি দেশে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।'৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে'
ফাইল ছবি।

শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এক বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গত বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপি জামায়াত যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, প্রিজাইডিং অফিসার হত্যাসহ সারা দেশে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছিল, তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা হয়েছিলো। বিএনপি জামায়াত এ দিনটিকে লক্ষ্য করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা করেছে। কিন্তু তাদের রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে।'

তারা (বিএনপি, জামায়াত) যদি দেশে কোন নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তবে তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় তিনি আওয়ামী লীগ সহ সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থেকে বিএনপি জামায়াতকে মোকাবেলা করার আহবান জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগম স্বপ্না, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম হোসেন আলী হাসান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দানিউল হক দানি প্রমুখ।

সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

সিরাজগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে আজাহার আলী রাজাখান ১৬৯ পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আব্দুল হাই সেখ পেয়েছেন ২৩ ভোট এবং অপর প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন পেয়েছেন ২ ভোট। এবং সাধারন সম্পাদক পদে মিজানুর রহমান দুদু ১৪২ পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বর্তমান সাধারন সম্পাদক আব্দুস সাত্তার শিকদার পেছেন ৭৮ ভোট। সিরাজগঞ্জ শহরের শহীদ এম মনুসর আলী অডিটোরিয়ামে ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে জেলা আওয়ামীলী কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। রবিবার সকালে সম্মেলনে প্রথম পর্বে শহীদ এম মনসুর আলী অডিটরিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এসময় সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি গাজী আমিনুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারন সম্পাদক এ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান, আবু ইউসুফ সূর্য্য, এ্যাড. আব্দুর রহমান, আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, মোস্তফা কামাল খান, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান পিপি, অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিনসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে রাজশাহী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৪টি বগী লাইনচ্যুত উত্তরাঞ্চল ও খুলনার সাথে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় ইকোপার্কের নিকট রাজশাহী এক্সপ্রেস লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৪টি বগী লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে উত্তরাঞ্চল ও খুলনার সাথে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা যাবার পথে সয়বাদ স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবার পর সেতুতে উঠার আগে রোববার সকাল সকাল ৮ টা ২০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের যাত্রী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা সদরের আমিরুল ইসলাম টিপু জানান, ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ায় ট্রেনের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও যাত্রীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। ট্রেনটি ল্ইানচ্যুত হলেও ছিটকে পড়ে যায়নি, দাড়িয়েই রয়েছে। তবে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। 

ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী অভিমুখে আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আব্দুল আউয়াল ভুইয়া সকাল ৯টার দিকে জানান, খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থেকে একটি রিলিফ ট্রেন সেখানে উদ্ধারে যাবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভালো নেই সিরাজগঞ্জের বীরাঙ্গনারা

ইসরাইল হোসেন বাবু

পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও এখনও গেজেট প্রকাশ হয়নি। 
স্বাধীনতার পর সিরাজগঞ্জের তিন মুক্তিযোদ্ধা সকিনা হোসেন, সাফিনা লোহানী ও আমিনা বেগম মিনা প্রতিশ্ঠা করেন ‘বীরাঙ্গনা পুনর্বাসন কেন্দ্র’। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়, যা আজও চালু হয়নি। এরপর ওই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বীরাঙ্গনারা নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান।

মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতা নারীদের এতদিন বীরাঙ্গনা বলা হলেও বর্তমান সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এখনও গেজেট প্রকাশ হয়নি।
সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থার পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৩৫ জন বীরাঙ্গনা সিরাজগঞ্জ শহরের ‘নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে’  আশ্রয় গ্রহণ করেন। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেন, যা আজও চালু হয়নি।

সিরাজগঞ্জের ৩৫ বীরাঙ্গনার মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে থাকা ১৮ জনের মধ্যে অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ, যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটিও নেই।
কয়েকজন বীরাঙ্গনা সরকারি ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির ইউসূফ বাচ্চু একুশে পদকের ১ লাখ টাকা এই বীরাঙ্গনাদের দান করেছেন।
এছাড়া স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব হারানো এই নারীদের কোনো প্রাপ্তি নেই বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী।

সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোল এলাকার বীরাঙ্গনা রাহিলা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র ৬ মাস আগে তার বিয়ে হয়। যুদ্ধ শুরু হলে পাকসেনা ও রাজাকাররা তার গ্রামে হানা দেয়। এসময় তাকে সেনাক্যাম্পে ধরে নিয়ে টানা ১৭ দিন আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সেখান থেকে ফিরে আসার পর স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি।
বর্তমানে তিনি শহরের এম এ মতিন বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। 

নতুন ভাঙ্গাবাড়ি এলাকার বীরাঙ্গনা সূর্য বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার এক ফুফাতো ভাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। পার্শ্ববর্তী ফকিরতলায় মুক্তিযোদ্ধারা এক স্থানীয় রাজাকারকে মেরে ফেলে।

এ কারণে রাজাকাররা সূর্য বেগমের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং টানা ২০ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। বতর্মানে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ও অসুস্থ সূর্য্য বেগম মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। এছাড়াও শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার মাহেলা বেগম, তেলকুপির কহিনুর বেগম, যমুনা নদীর ক্লোজার সংলগ্ন এলাকার সামিনা বেগম, মতিন সাহেবের ঘাট এলাকার আয়মনা বেগম, সদরের কান্দাপাড়ার হামিদা বেগমরা বসবাস করছেন নদীর তীরে, রাস্তার পাশে কিংম্বা রেল স্টেশনে।

এসব বীরাঙ্গনা জানান, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে সনদ পেয়েছেন, কিন্তু , ৪৩ বছরেও তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। বর্তমান সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিলেও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় তারা সনদ বা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।তারা দ্রুত গেজেট প্রকাশের দাবি জানান।

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।