শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪
যশোরের আলী ও সিরাজগঞ্জের রিয়াজ হুন্ডি ও চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায় ধনকুব
যশোরের আলী ও সিরাজগঞ্জের রিয়াজ হুন্ডি ও চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায় ধনকুব
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
সোনা চোরাচালানে চাঞ্চল্যকর তথ্য
তবে এবারের ঘটনা অনেকটাই ব্যতিক্রম। ইতোমধ্যেই যেসব ব্যক্তির নামের তালিকা পাওয়া গেছে, সেখানে বিমানবন্দরে কর্মরত অনেকের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একাধিক নাম রয়েছে। তালিকার বড় অংশ জুড়েই রয়েছে সিভিল এভিয়েশন, বিমান বাংলাদেশের পাইলট, বিমানবালা, ফ্লাইট স্টুয়ার্টসহ নানা স্তরের কর্মকর্তা। বেসরকারি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মীও এই চক্রের সদস্য বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিমানের ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য এখন যাচাই বাছাই চলছে। গত ১২ নভেম্বর বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আফসার রাসেলকে ২ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনাসহ আটক করা হয়। পরে ডিবি পুলিশ তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। রাসেল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সোনা চোরাচালানে বিমান সিন্ডিকেটের তথ্য দেয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বিমানের উর্ধ্বতনদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিমানের পাঁচ জন জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছে তা এক অর্থে বিস্ময়কর। বিমানবন্দরের অধিকাংশ সেক্টরের সঙ্গেই দুর্নীতিবাজ পাচারকারী চক্রের সদস্যদের যোগাযোগ রয়েছে।’
গোয়েন্দা তথ্যমতে, সোনা পাচারকারিদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কমপক্ষে ১০ জন মাফিয়াদের সদস্য ছিল। বর্তমানেও সরকারি দলের পাশাপাশি, বিরোধি দলের অনেকেই সোনা চোরাকারবারির সূত্র ধরে এসব মাফিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা এর আগে হোরোইন পাচারের পাশাপাশি সোনা পাচারকারী মাফিয়া চক্রের সদস্য ছিলেন বলেন গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিসের উপ-মাহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেনের একটি মার্সিডিজ গাড়ি রয়েছে। গুলশানের ডিসিজি মার্কেটে একটি দোকানের পাশাপাশি যমুনা ফিউচার পার্কেও তার আরো একটি দোকান রয়েছে। পান্থপথে তার নিজস্ব বাড়ি। বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ নিজেকে বিমানের বর্তমান চেয়ারম্যানের ‘ধর্মপুত্র’ পরিচয় দিয়ে বিমানবন্দরে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার মাধ্যমে বিমানের ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ, কেবিন ক্রু, ক্যাপ্টেন, বিমানবালা, অফিস স্টাফসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারির সিউিউল নিয়ন্ত্রণ করা হত। এমনি বিমানের কে বা কারা নিয়োগ পাবে, কার প্রমোশন হবে, প্রমোশন আর নিয়োগ পেতে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে। এর মধ্যে সে কত টাকা রাখবে আর উর্ধ্বতনদের কত টাকা দিবে তার মাধ্যমের চক্রের অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি বিমানের টেন্ডারও পলাশই নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর বাইরে বিমানের ‘কাবু’ থেকেও মোটা অংকের কমিশন পেতেন।
পুরো বাসা যেন টাকা আর স্বর্ণের 'খনি'!
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৪২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার ভোর ৩টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান শামীম ইকবাল জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক নওশাদ ও ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাজী নুরুজ্জামানকে আলোচিত ট্রেন পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ৪জন মাদক ব্যবসায়ী এবং বাকি ৩৫জন বিভিন্ন মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী ও কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীও রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
মোঃ লুৎফুল কবির সোহাগ
সিরাজগঞ্জ
২৩-১২-১৪
ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনার কারনে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচলে বিঘ্নিত
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ঘন কুয়াশায় কারনে মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর পর পর ৮/১০ টি বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও সেতুর ওপর এবং দু’পাশে যান চলাচল বিঘ্নিত ঘটে। পরে সেতু রক্ষনাবেক্ষন চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং সেতুর পশ্চিমপাড় থানা ও ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় সকাল ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।
সেতুর পশ্চিমপাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ঘন কুয়াশার কারনে সেতুর পশ্চিম অংশের ৭ এবং ৯ নং পিলারের কাছে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পর পর ৮/১২ বাস, মুরগী বহনকারী ট্রাক ও প্রাইভেটকার একটির পেছনে আরেকটির সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে সেতুর ওপরে যানবাহন চলাচলে বিঘ্নিত ঘটে। যে কারনে সেতুর উভয় প্রান্তে এর প্রভাবে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি ছিল।
সেতু রক্ষনাবেক্ষনকারী মেটারোলজিক্যাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানী অব চায়না’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী উত্তর লেনে যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যান চলাচলকারী সেতুর দক্ষিন লেনটি দুর্ঘটনার কারনে সকাল ১০টা পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ যানবাহন সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঘন কুয়াশা ও চালকদের অসাবধনতার কারনে ইদানিং সেতুতে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে।
মোঃ লুৎফুল কবির সোহাগ
সিরাজগঞ্জ
২৩-১২-১৪
সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষনা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। রোববার রাতে সদর থানা ছাত্রলীগের নেতারা জিটিভির’র জেলা প্রতিনিধি সাজিরুল ইসলাম সঞ্চয়কে সভাপতি ও মনিরুল ইসলাম মনিকে সাধারন সম্পাদক করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষনা করেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সোমবার সন্ধ্যায় শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এক জরুরী সভা করা হয়। এ সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে থানা ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি অবাঞ্চিত ঘোষনা করে ছাত্রনেতা রহমত আলীকে সভাপতি ও ইউসূফ আলীকে সাধারন সম্পাদক করে পাল্টা নতুন আরেকটি কমিটি ঘোষনা করা হয়। এ উপলক্ষে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক জুয়েল রানা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৯টি ওর্য়াডের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা বলেন, শিয়ালকোল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির নেতারা ৯টি ওর্য়াডের কমিটি গঠন করেছে। শীঘ্রই ইউনিয়ন কমিটির সন্মেলন হওয়ার কথা। অথচ ইউনিয়নের নেতাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে রোববার রাতে সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক একক সিদ্বান্তে বির্তকিত কমিটি ঘোষনা করেছে। যা সংবিধান ও গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। এতে করে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
মোঃ লুৎফুল
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪
কাজীপুরে কীটনাশক ঔষধের গোডাউনে চুরি
সিনজেন্টা কোম্পানীর এজেন্ট ব্যবসায়ী নুর মোমিন রানা জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে মেঘাই পুরাতন বাজারে অবস্থিত গোডাউনে সংরক্ষিত কৃষিকাজে ব্যবহৃত ২১ ধরণের কীটনাশক ঔষধের প্যাকেট চুরি গেছে। রাতে স্থানীয়রা গোডাউন সংলগ্ন রাস্তায় একটি ট্রাক থেমে থাকতে দেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে চোরেরা ওই ট্রাকেই ঔষধের প্যাকেটগুলো তুলে নিয়ে গেছে। চুরি হওয়া ঔষধের মূল্য ১২ লাখ ২৯ হাজার পঞ্চাশ টাকা। ঔষধের প্রতিটি প্যাকেটে মেসার্স নুর ট্রেডার্সের সীল দেয়া রয়েছে। সহজেই কেউ এগুলো বিক্রিও করতে পারবে না। বিষয়টি অবগত করার পর সিনজেনটা কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা গোডাউন পরিদর্শন করেছে।
কাজীপুর থানার অফিসার ইন চার্জ মুহাম্মদ আব্দুল জলিল জানান, থানা এলাকার সন্নিকটে এমন চুরির ঘটনা এই ব্যবসা সম্পর্কে জানা শোনা লোক ছাড়া সম্ভব নয়। ঘটনাটি উদ্ঘাটনে চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী থানায় সাধারন ডাইরী করেছে।
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪
বীরমাতা
৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হন সিরাজগঞ্জের বীরাঙ্গনারা। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর তাদের ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও এখনও গেজেট প্রকাশ হয়নি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিবার থেকে বিছিন্ন হওয়া ৩৫ জন বীরাঙ্গনা সিরাজগঞ্জ শহরের ‘নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ আশ্রয় নেন। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ‘সিরাজগঞ্জ নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র।’ এখানেই থাকতেন ওই ৩৫ বীর নারী। কিন্তু কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা আবারও সমাজের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মুখ লুকিয়ে রাখতে শুরু করেন। এ ৩৫ জন বীর নারীর মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৭ জন মারা গেছেন। আর বেঁচে থাকা ১৮ জনের মধ্যে অনেকেই এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন আরিফের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ শহর দখল করে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতে শুরু করে। ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে বর্বরোচিত এ কার্যক্রম। হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতনের সেই দিনগুলোর স্মৃতি মনে হলে এখনও কেঁদে ওঠেন তারা।
কমলা বেগম, স্বামী মৃত, শুকুর আলী, ভিক্টোরিয়া স্কুল রোড, সিরাজগঞ্জ। যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হামলার ভয়ে তিনি পৈতৃক ভিটা ছেড়ে খোকসাবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ২০ অথবা ২২শে এপ্রিল কতিপয় রাজাকার আশ্রয় কেন্দ্র থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ৩দিন আটকে রেখে তার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। পরে অসুস্থ অবস্থায় সে ছাড়া পেলেও তার স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি। এখনও সে পিতৃগৃহেই বসবাস করছেন। রহিমা বেগম, স্বামী-রিয়াজ উদ্দিন, চককোবদাসপাড়া, সিরাজগঞ্জ। পাকবাহিনীর রোষানল থেকে বাঁচতে অনেকের মতো তিনিও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে একই গ্রামের রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রহিমাকে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেখানে নির্যাতনের একপর্যায়ে তার অনাগত সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। নির্যাতনের সেই ভয়াল স্মৃতি তিনি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন।
রোকেয়া খাতুন, স্বামী মৃত, আমজাদ হোসেন তালুকদার, সয়াধানগড়া-সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ শহর পাকসেনাদের দখলে চলে যাওয়ার পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে রোকেয়া পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন। স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা বলে বাড়িতে নিয়ে যায়। ১লা মে ওই গ্রাম ঘেরাও করে নির্যাতন চালায় পাকসেনারা এবং রোকেয়াকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। এরপর শহরের ওয়াপদা অফিসে স্থাপিত ক্যাম্পে ১০ দিন আটকে রেখে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। পরে সে ফিরে এলেও স্বামীর বাড়িতে তার আর ঠাঁই হয়নি।
নূরজাহান বেগম, স্বামী রস্তম সেখ, সয়াধানগড়া-সিরাজগঞ্জ। যুদ্ধকালীন স্বামীর বাড়ি থেকে এলাকার মুখচেনা কয়েকজন রাজাকার তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর শহরের ওয়াপদা ক্যাম্পে নিয়ে তার পরনের কাপড় খুলে লোকজনের সামনেই বিবস্ত্র করা হয়। এরপর নির্যাতন করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাড়িতে ফিরে আসার পর সমাজ তাকে মেনে না নেয়ায় দীর্ঘদিন তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে হয়।
রাহিলা বেগম, স্বামী আকবর আলী, শিবনাথপুর, শিয়ালকোল-সিরাজগঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র ৬ মাস আগে তার বিয়ে হয়। স্বামী সংসারে তখন সে সুখের স্বপ্ন বিভোর। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে পাকসেনা ও রাজাকাররা তার গ্রামে হানা দেয়। এসময় তার স্বামী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ধরা পড়েন রাহিলা। এরপর টানা ১৭ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ফিরে আসার পর স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি। বর্তমানে সে শহরের এম এ মতিন বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন।
আয়েশা বেগম, স্বামী কছিম উদ্দিন, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ। স্থানীয় রাজাকাররা অভয় দেয়ায় তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন। এরপর রাজাকাররা পাকসেনাদের গ্রামে ডেকে আনে। আয়শাকে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেখানে টানা ২১ দিন তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। সেই ভয়াল স্মৃতি মনে হলেও এখনও কেঁদে ওঠেন এ বীরাঙ্গনা মাতা।
সূর্য বেগম, স্বামী হারুনর রশিদ, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি-সিরাজগঞ্জ। তার এক ফুফাতো ভাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। পার্শ্ববর্তী ফকিরতলায় মুক্তিযোদ্ধারা এক স্থানীয় রাজাকারকে মেরে ফেলে। এ কারণে পাকসেনারা ক্ষিপ্ত রাজাকারদের সাথে নিয়ে সূর্য বেগমের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর টানা ২০ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তার ওপর চলে নির্যাতন। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত অসুস্থ সূর্য বেগম এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
এছাড়া শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার আবদুল মতিনের স্ত্রী মাহেলা বেগম, তেলকুপি এলাকার কহিনুর বেগম, যমুনা নদীর ক্লোজারসংলগ্ন শুকুর আলীর স্ত্রী সামিনা বেগম, মতিন সাহেবের ঘাট এলাকার শমসের আলীর স্ত্রী আয়মনা বেগম, পিটিআই, স্কুল এলাকার শামসুল আলমের স্ত্রী সুরাইয়া (ধুলি), সদর উপজেলার কান্দাপাড়া এলাকার হামিদা বেগম ও কালিয়াহরিপুর এলাকার আছিয়া বেগম, কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউপির চানপুর গ্রামের মৃত হরিপদের স্ত্রী রাজুবালা, একই এলাকার জয়গন বেগম, করিমন বেগম ও হাজেরা বেগম এখনও বিচারের আশায় বেঁচে আছেন। এসব বীরাঙ্গনা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সংগ্রামের স্বীকৃতি সনদ পেয়েছেন। কিন্তু সম্ভ্রম হারিয়েও ৪৪ বছর আমরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। বর্তমান সরকার আমাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও আজও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় আমরা সনদ বা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। দ্রুত সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন দাবি করেছেন এই বীরাঙ্গনা মায়েরা।
যারা আর নেই
বাহাতন বেগম, স্বামী শুকুর আলী, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ। ১৭ই এপ্রিল পাকসেনারা রাজাকারদের সহায়তায় তার স্বামীকে হত্যা করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভয়ে বাহাতন পালিয়ে গেলেও ৩ মাস পর সে আবার বাড়িতে ফিরে আসলে পাকসেনারা তাকে ধরে ফেলে। এসময় ৮-৯ জন পাকসেনা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। গ্রামের বৃদ্ধ মহিলারা এ দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেও পাকসেনাদের মন গলাতে পারেনি। এরপর পর্যায়ক্রমে তার ছেলে মুসা ও ২ মেয়ে মরিয়ম ও হাসিনা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত বছর তার মৃত্যু হয়। বীরাঙ্গনা আছিয়া খাতুন, স্বামী আবদুল মান্নান, নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ। তার স্বামী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ কারণে এলাকার রাজাকাররা আছিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয় রাজাকার বাদশাহ নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখার নামে আছিয়াকে পার্শ্ববর্তী নলিছাপাড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। যুদ্ধ শেষে ফিরে এলেও তার স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি। এরপর থেকে তিনি মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত ৫ই নভেম্বর তিনি মারা যান। এছাড়াও শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার আলাউদ্দিন সেখের স্ত্রী জোসনা বানু, চককোবদাসপাড়ার সূর্য বেগম, একই এলাকার আয়েশা বেগম, ঝর্না বেগম ও কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল এলাকার হাসিনা বেগমসহ চিহিৃত ১৭ জন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থার পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী জানান, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বীরাঙ্গনারা আবারও ঠিকানাবিহীন হয়ে পড়েন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে পুনরায় তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এখনও ১৮ বীরাঙ্গনা নানা সমস্যায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু তাদের দেখার কেউ নেই। গত ৪৪ বছরে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কয়েক জন বীরাঙ্গনা সরকারি ভিজিএফ কর্মসূচির কার্ড পেয়েছেন। আর ২১শে পদকপ্রাপ্ত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তার পদক প্রাপ্তির সাথে পাওয়া ১ লাখ টাকা বীরাঙ্গনাদের উৎসর্গ করেছেন এটাই বীরাঙ্গনাদের জীবনের বড় প্রাপ্তি। সিরাজগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি জানান, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকার জন্য সংগ্রাম করায় তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং তারা সরকারি নানা সুবিধা গ্রহণ করছেন। তেমনি বীরাঙ্গনারও সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও দেশের জন্য তারাও নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, ভোগ করেছেন পাশবিক নির্যাতন। এ অবস্থায় বর্র্তমান সরকার বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়ায় সাধুবাদ জানিয়ে দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধারা।
'৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে' সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের বর্ধিত সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আগামী ৫ জানুয়ারি দেশে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।'৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে'
ফাইল ছবি।
শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এক বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গত বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপি জামায়াত যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, প্রিজাইডিং অফিসার হত্যাসহ সারা দেশে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছিল, তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা হয়েছিলো। বিএনপি জামায়াত এ দিনটিকে লক্ষ্য করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা করেছে। কিন্তু তাদের রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে।'
তারা (বিএনপি, জামায়াত) যদি দেশে কোন নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তবে তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় তিনি আওয়ামী লীগ সহ সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থেকে বিএনপি জামায়াতকে মোকাবেলা করার আহবান জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগম স্বপ্না, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম হোসেন আলী হাসান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দানিউল হক দানি প্রমুখ।