পানি উন্নয়ন বিভাগের একটি প্রকল্প সিরাজগঞ্জের উন্নয়নধারাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সর্বস্তরের জনতা মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা সহ এক আনন্দ মিছিলের উদ্বোধন ও নেতৃত্ব দেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়।
মোটর শোভাযাত্রাসহ আনন্দ মিছিল যমুনাপারের ছোনগাছা বাজার থেকে কাজীপুরের
মেঘাই যমুনা নদীর তীর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার প্রদক্ষিন করে পথ সভায়
মিলিত হয়। পরে সেখান থেকে আবার আনন্দ মিছিল সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকায়
যমুনানদীরপাড়ে এসে শেষ হয়। বাহুকায় স্বতস্ফুর্তভাবে সংবর্ধনা সভার আয়োজন
করা হয়।
এসময় প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, এই
প্রকল্প সিরাজগঞ্জ থেকে কাজীপুর পর্যন্ত যমুনাপারের দৃশ্যপটও পাল্টে দেবে।
মানুুষ আর ভাঙ্গন তান্ডবলীলায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। প্রতি বছর বর্ষা
মৌসুমের শুরুতে এবং পানি নেমে যাবার সময় ভাঙ্গনের তান্ডবলীলা থেকে
যমুনাপারের মানুষ রেহাই পাবে । সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ডান তীর রক্ষায় বহু
প্রতীক্ষিত ও কাঙ্খিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রকল্পটি ১২ সেপ্টেম্বর
একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ”যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার
খুদবান্দি-সিংড়াবাড়ি- শুভগাছা এলাকা সংরক্ষণ প্রকল্প ” অনুমোদন দেয়া
হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে চার শ পয়ষট্রি কোটি ছেষট্রি
লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হবে বলে বৈঠক
সূত্রে জানা গেছে।
এসময় তিনি
আরো বলেন, প্রতিবছর যমুনা নদীর ভাঙ্গন এ অঞ্চলের মানুষকে সহায় সম্বলহীন
করে তোলে। ভাঙ্গনে অনেক পরিবারে নাড়ির বাঁধনও ছিন্ন হয়ে যায় । চলতি বছরের
বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকায বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে প্রায়
দুই শ পরিবার ভিটে মাটি সহায় সম্বল হারিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ
নাসিমের নির্দেশে জমি হুকুম দখল ছাড়াই বাহুকায় তড়িঘড়ি করে নতুন রিং বাঁধ
নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সে বাঁধও পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাায়। তলব করা হয়
সেনাবাহিনী। প্রায় চার দিন পানি উন্নয়ন বিভাগের নেতৃত্বে দিন রাত কাজ করে
সেই বাঁধ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সে সময় সারা দেশে বাহুকা বাঁধ নিয়ে হৈচৈ পড়ে
যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম , পানি উন্নয়ন বোর্ডের
অতিরিক্ত মহা পরিচালকসহ বিভাগীয় কর্মকর্তারা ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদও
বার বার বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। বাহুকার
পাশ্ববর্তী এলাকা সহ গোটা সিরাজগঞ্জের মানুষ যেন সেই চার দিন আতংকের মধ্যে
বসবাস করেছে।
পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, প্রকল্প
অনুমোদনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রয়েছে। এই
প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জ হতে কাজীপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০
কিঃমিঃ এলাকা স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন মুক্ত হবে। এর আগে প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি
টাকা ব্যয় করে যমুনাপারে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। এ প্রকল্প
বাস্তবায়নের যমুনাপারের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।
যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙ্গন হতে কাজীপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ
বিভিন্ন স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষা করা এ প্রকল্পের মুল উদ্দেশ্য। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ১৮ কিঃমিঃ যমুনা নদীতে ড্রেজিং, যমুনাপারের দুটি
স্পার শক্তিশালী করন, ব্রক্ষ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংরক্ষণ ও ৪০
কিমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার করা। প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করার
জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী
প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান।
এসময় আরো বক্তব্যদেন কেন্দ্রীয়
কৃষকলীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন, সদর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ
সম্পাদক মিজানুর রহমান দুদু, ইউপি
চেয়ারম্যান ও ছোনগাছা ইউনয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ সহিদুল আলম, ইউপি চেয়ারম্যাস গোলাম মোস্তফা খোকন, মেঘাই পথসভায়
কাজীপুর উপজেলা আওযামীলীগের সভাপতিশওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান
ও পৌর মেয়র হাজী নিজাম উদ্দিন প্রমুখ। পথে পথে যুবলীগ ছাত্রলীগ ও
স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে আনন্দ মিছিলকে অভিনন্দন জানায়
এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ
নাসিমকে অভিনন্দন জানায়।