শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

নির্বাচনে অন্য কোন ফর্মুলা দিয়ে লাভ নেইঃ সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম

নির্বাাচনে অন্য কোন ফর্মুলা দিয়ে লাভ নেই মন্তব্য করে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন- ভারত আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে। ২০১৯ সালে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে বর্তমান প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার অধিনেই নির্বাচন হবে। তিনি শুক্রবার বিকেলে  রায়গঞ্জে রক্তাক্ত ভূইয়াগাতী দিবস স্মরণে আয়োজিত বিশাল স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।

১৯৯৬ সালে  খালেদা জিযার প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে ৬ মার্চ সরকারের পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে ভূইয়াগাতীতে ছাত্রনেতা জসমত, আনন্দ, রানা ও বুলবুল শহীদ হয়। তাদের স্মরণে রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ এই স্মরণসভার আয়োজন করেন। খালেদা জিযার প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত ও গণতন্ত্র  পূনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিহত ছাত্র নেতাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণসভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান অতিথি মঞ্চে আরোহন করার আগে শহীদ চার ছাত্রনেতার প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
চান্দাইকোনা হাজী ওয়াহেদ মরিয়ম কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের বৃহত্তম এই বিশাল শ্বরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম হোসেন শোভন সরকার। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ও জেলার সদর আসনের এম.পি ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না, গাজী ম,ম আমজাদ হোসেন মিলন এমপি, হাবিবুর রহমান হাবিব এম.পি, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ আব্দুল হান্নান, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট, লুৎফর রহমান দিলু,  উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাদী আলমাজী জিন্নাহ, উপজেরা চেয়ার‌্যান মারুফ বিন হাবিব, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ আব্দুল হাকিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জিহাদ আল ইসলাম ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক প্রমুখ। বিকেল তিনটায়। এরই মধ্যে পার্শ্ববতী উপজেলা, গ্রাম গ্রামান্তর থেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ নাসিম ভক্তরা সমবেত হয় হাজী ওয়াহেদ মরিয়ম কলেজ মাঠে। জনসমাগমে কানায় কানায় ভরে ওঠে কলেজ মাঠ। শোক বিধুঁর এ স্মরণ সভা এক পর্যায়ে বিশাল জনসমুদ্রে রুপ নেয়। স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি মোহাম্মদ নাসিম সভাস্থলে পৌছান ঠিক চারটায়। কলেজ মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কে এক শটিরও বেশী নানা সাইজের রংবেরংয়ের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দের আগমণ উপলক্ষে।

স্মরণ সভায় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামীলীগের এই সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন- বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। ইতিহাস বলে যারা নির্বাচন বর্জন করে তারা বরাবরই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হযে পড়ে। বিএনপি আগামী নির্বাচনকেও বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে নাসিম বলেছেন- নির্বাচন পরিচালনা এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানের বাইরে যাবার কোন সুযোগ নেই। ভারত আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে। ২০১৯ সালে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে  সরকার প্রধান হবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্বাচনে দেশের শান্তি সমৃদ্ধি ও উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আবারো আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোটকেই ভোট দেবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।  নাসিম বলেছেন- ২০১৯ সালের নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিএনপি আবারও নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে মাঠে নেমেছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অযৌক্তিক মন্তব্য করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন দেশের অব্যাহত উন্নয়ন এবং জনগনের মন জয় করেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ আবারও বিজয়ী হবে। কোন ষড়যন্ত্রই এ বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম  বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আসুন, খেলা হবে মাঠে। রাষ্ট্রপতি একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেছেন। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও দক্ষ রেফারি হিসেবে ভোট পরিচালনা করবে। এ ভোটের জয় পরাজয় মহাজোট মেনে নেবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে যাবে। আওয়ামীলীগের রাজনীতির অধ্যায় হচ্ছে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। অপরদিকে বি,এন,পির রাজনীতি হচ্ছে জ্বালাও পোড়াও, মানুষ হত্যা লুটপাট  রাজনীতি।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোহাম্মদ নাসিম জঙ্গী দমন, স্বাস্থ্য শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুত সহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরে বরেছেন- বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হযেছে। এই সেতু নিয়ে বি,এন,পি সহ বিশ্বব্যাংকের অনেকেই মিথ্যাচার করেছেন। কানাডার আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। মিথ্যা কথা বলার জন্য খালেদা জিয়ার শাস্তি পাওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি দলের প্রতিটি নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের সরকারের সাফল্য পাড়ায় মহল্লায় এবং গ্রামে গ্রামে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার আহবান জানান।

বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন ২০১৪ সালে একজন নেত্রী দেশে আগুন জ্বালিয়ে জঙ্গীবাদকে উস্কানি দিয়ে ভোটকে বানচাল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনগণ সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে একদিন জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল। গুলশানে তারা ৩০ জন বিদেশীকে হত্যা করে, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে মুসল্লিদের হত্যা করে। তারপরও দেশপ্রেম ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পুলিশ জীবনের বিনিময়ে মুসল্লিদের রক্ষা করেছিল। ইসলাম জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয় না, মুসলমান হয়ে মুসলমান হত্যার মতো জঘন্য কাজ ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গী দমন হয়েছে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে  বিশ্বব্যাপী আমাদের দেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মায়ের স্নেহ আর বোনের ভালবাসা  দিয়ে জনগণের জন্য কাজ করছেন।

এর আগে মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোলে নির্মানাধীন শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। তিনি রায়গঞ্জে পৌছে চান্দাইকোনা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করেন এবং মুসুল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।


সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।