আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী
লীগের প্রার্থী বাছাই করতে দেশজুড়ে প্রাথমিক জরিপ চালানো হচ্ছে। দলীয়
সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুটা আগেই তৃণমূল পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে
বর্তমান এমপিদের জনপ্রিয়তা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান যাচাইয়ের কাজ
গুছিয়ে রাখছেন। তিনি এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারির তিন মাস আগে একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক
কাজ সম্পর্কে প্রচারের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য দলীয় এমপিদের
নির্দেশ দিয়েছেন।
এভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু
হয়েছে আওয়ামী লীগে। বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তও করা হয়েছে
বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ওই সব আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন পাবেন
না। এ কারণে তাদের নানাভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে যোগ্যতা
নিয়ে প্রশ্ন থাকার পরও গত নির্বাচনের একজন প্রার্থীকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর
সদস্য করা হলেও তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন না বলে জানা
গেছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর
আওয়ামী লীগদলীয় এমপিরা বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে
জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে
যোগাযোগ শুরু করেছেন। এ নিয়ে অবশ্য কিছু কিছু নির্বাচনী এলাকায় দলের
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ বাড়ছে।
কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, বর্তমান এমপিদের
মধ্যে অনেকেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়ে ছিটকে পড়তে
পারেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিজয়ী
হয়েছেন। তাদের অনেকেরই জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। এই এমপিদের কেউ কেউ অপকর্মের কারণে গণমাধ্যমের বড়োসড়ো শিরোনাম হয়েছেন।
এমন এমপির সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তাদের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন
দলের নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতা। এই এমপিদের নির্বাচনী এলাকায়
নতুন এমপি মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন কয়েকজন
বিশিষ্টজনকেও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এদিকে, আগামী জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনটি কর্মপন্থা তৈরি করেছে আওয়ামী
লীগ। সেগুলো হচ্ছে_ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ, আগামী দুই বছরের সম্ভাব্য
কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়
ভোটকেন্দ্র কমিটি গঠন। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের আগামী নভেম্বর থেকে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম
বৈঠকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দেন।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার জন্য
নেতাদের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশগ্রহণের কার্যক্রম গুছিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য সুনির্দিষ্টভাবে
তিনটি কর্মপন্থা তৈরি করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতারা দ্রুতই
সাংগঠনিক সফরে বের হবেন।
দলীয় সাধারণ সম্পাদকের সফরকালে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ
হিসেবে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে জনগণকে জানানোর উদ্যোগ
নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে নির্বাচনের আগপর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী দুই বছরের মধ্যে
যেসব উন্নয়নকাজ করা হবে, সে সম্পর্কেও জনগণকে জানানো হবে। একই সঙ্গে
প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটকেন্দ্র কমিটি গঠনের নির্দেশ থাকবে। অবশ্য
ভোটকেন্দ্র কমিটির কার্যক্রম অনেক নির্বাচনী এলাকায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
নতুন ভোটারদের তালিকা সংগ্রহের পাশাপাশি ভোটার তালিকা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।