সৌরভ নেই- নেই তেমন কোন আকর্ষণ। তবে আবহমান গ্রামবাংলার শিমুল ফুলের গাছের সারি সারি চিরন্তন এক রুপ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। শিমুল ফুল ড্রইং রুমের ফুলের তোড়ায় স্থান পাবার যোগ্যতা কোনদিনই ছিল না। কোন দিন হবেও না। কিন্ত শিমুল গাছ গ্রামবাংলার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নে এক বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।
সারিবদ্ধভাবে বা বিক্ষিপ্তভাবে কাঁটাযুক্ত শিমুল গাছ গ্রামবাংলার সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে। তবে লালচে তাম্র বর্ণের মাটিতে টিলা আকারের স্থানে শিমুল গাছ বেশি জন্মে থাকে। বীজ থেকে চারা ফুটে বের হবার পর থেকে ৭/৮ বছরের মধ্যেই শিমুল গাছে ফুল ফোটে ও ফল ধরে। তবে গাছের বয়োপ্রাপ্তি হয় ১০/১২ বছর পর। এসময় থেকেই শিমুল গাছ থেকে অর্থনৈতিক উপযোগিতা পাওয়া যায়। এর ফুল গুচ্ছ আকারের কিঞ্চিত লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফুলের তেমন কোন আকর্ষিত করবার মতো সৌরভ না থাকলেও পথচারীরা ক্ষণিকের তরে হলেও এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে পারে না।
শিমুল গাছ সাধারণ ৭০/৮০ হাত লম্বা ও ৬/৭ হাত বা তদুর্ধ মোটা আকারের হয়ে থাকে। বন্যার পানি বা খরায় এর কোন ক্ষতি হয়না। বাঁচেও শতাব্দির পর শতাব্দি কাল পর্যন্ত। মাঘ ফাল্গুন মাসে এ গাছে ফুল ধরে। আগুন ঝরা এই ফাগুনে শিমুল ফুল অন্যরকম আবহ সৃষ্টি করে। চৈত্র বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ক হয়। এগুলি সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে নিলে এর ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে সাদা ধবধবে তুলা। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ৩/৪ মন এমনকি তারও বেশি তুলা পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি শিমুল তুলা ৩শ’ ৫০ টাকা কেজি হিসাবে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা।
এক বিঘা পরিমান পতিত জমিতে লাইন করে প্রায় ৩০টি শিমুল গাছ লাগানো যেতে পারে। এর সবগুলিতে ফল দেয়া শুরু করলে তা থেকে তুলা সংগ্রহ করে বিক্রি করলে বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হতে পারে। এই জনপদে বেশকিছু পরিবার রয়েছে শিমুলের সংগৃহিত তুলা বিক্রি করে পরিবার- পরিজন নিয়ে সংসার চালান। এছাড়া শিমুল গাছ বড় আকারের হওয়ায় এর নিচে শাক-সবজি, মরিচ, বেগুন, পিঁয়াজ- রসুন, হলুদ ইত্যাদি আবাদ করায়ও কোন অসুবিধা হয়না। তবে অত্রাঞ্চলের এক শ্রেনীর অলস প্রকৃতির লোকজনের অবহেলার দরুণ শিমুল গাছ থেকে যথাসময়ে ফল সংগ্রহ না করার কারণে বিপুল মূল্যের তুলা গাছে থাকা অবস্থাতেই আকাশে উড়ে যায়।
শিমুল তুলা যে শুধু মাথায় দেয়া বালিশের কাজে ব্যবহৃত হয় তাই নয়- শিমুল গাছের ছালও বিষফোঁড়া নিরাময়ে ধরন্তরী মহৌষধ। কবিরাজগণ পুরনো শিমুল গাছের ছাল চূর্ণ করে তাতে পুরানো গাওয়া ঘি মিশ্রিত করে বিষফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিয়ে থাকে। তাছাড়া শিমুল মুলের কুচি কুচি চূর্ণ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে গুড়সহ খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। এমনকি বলবর্দ্ধকও বটে- মন্তব্য কবিরাজগণের। শিমুলের কচি কাঠ দিয়াশলাইয়ের কাঠি তৈরিতে উৎকৃষ্ট উপাদান হিসাবে বিবেচিত। শিমুলের পাতাও উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিমুল তুলার বীজ থেকে কোন ভোজ্য তেল তৈরি সম্ভব কিনা তাও পরীক্ষা- নিরীক্ষার দাবি রাখে।