সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪

উপজেলা নির্বাচন আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের অগ্নিপরীক্ষা

উপজেলা নির্বাচন
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে। খাতা-কলমে নয়, সাংগঠনিক দক্ষতা আর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রমাণের এ পরীক্ষা নেবেন স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

এই অগ্নিপরীক্ষার প্রশ্নপত্রে যা থাকছে তা হলো- উপজেলা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব মেটানো ও বিদ্রোহী পার্থী ঠেকানো; যেকোনো মূল্যে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করে আনতে হবে। আর এ পরীক্ষায় পাস করলে যেমন আছে পুরস্কার তেমনি ফেল করলে আগামী কাউন্সিলে পদ হারাতে হবে তাদের।

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, দলীয় কোন্দল ও তৃণমূল নেতাদের অবমূল্যায়ন এবং প্রার্থীদের দুর্নীতিতেই এ পরাজয়। তাই এবার উপজেলা নির্বাচনের আগেই এসব সমস্যা সমাধান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এসব নির্দেশনার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়েছে সাংগঠনিক সম্পাদকদের ঘাড়ে। অবশ্য সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে জাতীয় অনেক ইস্যুও বড় ভূমিকা রেখেছে। সেসব বিষয়েও এবার ব্যাপকভাবে ইতিবাচক প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ।

উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সাত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে সাতটি কমিটি গঠন করেছে। এসব কমিটির কার্যক্রম দেখভাল করবেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবাদুল কাদের এবং সাহারা খাতুন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যারা আগামী উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করে আনতে পারবে তাদের আগামী কাউন্সিলে নানাভাবে পুরস্কৃত করা হবে। যারা ব্যর্থ হবেন তাদের কপালে খারাবি আছে! পদ হারাবেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বাংলামেইলকে  বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ফলাফলের মাধ্যমে সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি তুলে ধরা হবে। ইতোমধ্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাদের এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। বিগত দিনের সাংগঠনিক সম্পাদকদের আমলনামা নেত্রীর কাছে রয়েছে। যারা সঠিকভাবে তৃণমূলের দল গোছানোর কাজে দক্ষতা দেখাতে পারবেন, তাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে আগামী কাউন্সিলে কমিটিতে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করবেন দলীয় প্রধান।’

তিনি আরো জানান, গত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে প্রথমবার সাংগঠনিক সম্পাদকদের দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছিল। সে সময় অনেকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পারেননি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় ও সরকার গঠনের পর মন্ত্রী-এমপিরা আর নির্বাচনী এলাকায় পদধূলি দেননি। এই ফাঁকে নেতৃত্বাহীন তৃণমূল সংগঠন অন্তর্দ্বন্দ্বে ভঙুর অবস্থায় চলে যায়। অবশেষে বিষয়টা বুঝতে পেরেই শেখ হাসিনা দশম সংসদের মন্ত্রিসভায় অনেককে না রেখে সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাত সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নিয়োগ পান জাহাঙ্গীর কবীর নানক (ঢাকা বিভাগ), আহমদ হোসেন (চট্টগ্রাম বিভাগ), মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ (সিলেট বিভাগ), বিএম মোজাম্মেল হক (খুলনায় বিভাগ), আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম (বরিশাল বিভাগ), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (রাজশাহী বিভাগ) ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে (রংপুর বিভাগের) দায়িত্ব দেয়া হয়। কাউন্সিলের পরপরই সাত বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় এই সাতজনকে।

পাচঁ সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর সাংগঠনিক সম্পাদকদের বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অদক্ষতা, পৌরসভায় গোপন লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্যদের প্রতি দলীয় সমর্থন ঘোষণাসহ ইত্যাদি অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক অবস্থার রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকদের তাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করতে হবে। তাই এই সম্পাদকরা অনেক চরম ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয়ভাবে ৭ বিভাগের জন্য ৭টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি আমার জেলার খোঁজখবর নিচ্ছি। কীভাবে কাজকর্ম করতে হবে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (রাজশাহী বিভাগ) বলেন, ‘আমি এলাকাতেই আছি। আমার কাজকর্ম সঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের অগ্নিপরীক্ষা হবে। কারণ, সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিভাগীয় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোর তৃনমূল নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নতুন করে উজ্জবীত করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হবে- কে কতটুকু করতে পেরেছে।’

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।