সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে আবারও কাজ করতে চান
যমুনা পাড়ের মাটি ও মানুষের নেতা আবু ইউসুফ সূর্য
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আজীবন আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, সিরাজগঞ্জের
নিপীড়িত মানুষের জন্যে নানা আন্দোলন সংগ্রাম করে নিজেকে একজন জননেতায়
পরিণত করেছেন আবু ইউসুফ সূর্য।
তিনি তার মেধা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও সততাকে কাজে
লাগিয়ে সিরাজগঞ্জবাসীর বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। গরীব ও মেহনতি
মানুষের সংগ্রামী ত্যাগী নেতা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি যমুনা
পাড়ের মাটি ও মানুষের নেতা আবু ইউসুফ সূর্য সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
আবু ইউসুফ সূর্য উত্তর জনপদের রাজা দিঘাপতির রাজ্যে ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ
করেন। তাঁর পিতা আজিজুর রহমান ব্রিটিশ সরকারের মহকুমা ম্যাজি্েষ্ট্রটের
ডেপুটি কালেক্টর পদে নিয়োজিত ছিলেন। তার মাতার নাম গুলশান আরা। পিতা সরকারী
কর্মচারী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমায় বদলী হতে হয়েছে। ফলে কোন
নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়া সম্ভব হয়নি।
১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকায়
ওয়েস্ট-ইন হাইস্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব
খান ক্ষমতা দখল করে। তখন তার পিতা তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী এম.
মনসুর আলীর বড় ভাই হওয়ায় পদের অবনতি দেখাইয়া বগুড়া জেলার পাঁচবিবি থানায়
সার্কেল অফিসার হিসেবে বদলী করা হয়। এতে আবু ইউসুফ সূর্য বাধ্য হয়ে
নিজগ্রাম রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়িপাড়ায় ফিরে আসেন। এবং গান্ধাইল স্কুলে
ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে গান্ধাইল স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষঅয় দ্বিতীয়
বিভাগে পাশ করেন। ঐ বছরই সিরাজগঞ্জ বি.এ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন।
স্কুল কলেজে লেখাপড়ার সময় চাচা এম. মনসুর আলী সান্নিধ্যে এসে ছাত্রলীগের
কর্মী হিসেবে সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং সম্মিলিত বিরোধী দলের
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণা কাজে
অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রণীত ৬ দফা এবং ছাত্র সমাজের প্রণীত ১১ দফা দাবীর
আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
সেই সাথে ১৯৭০ সালে ঐতিহাসিক নির্বাচনে দলের
নিরঙ্কুশ বিজয় ছিনিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জ বি.এ
কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বি.এ. পাশ করেন এবং ঐ বছরেই অসহযোগ আন্দোলনে
অংশগ্রহণ করেন। পরে ভারত হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে
বগুড়া জেলার ধুনট এবং কাজিপুরের বড়ইতলা গ্রামে ও কাজিপুর থানাকে মুক্ত
করাসহ শৈলাবাড়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জকে
হানাদার মুক্ত করতে তাঁর ভূমিকা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সিরাজগঞ্জবাসী। ১৬
ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হন। ১৯৭২ সালে তিনি কাজিপুর থানা আওয়ামী যুবলীগের
সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সম্মেলনে
কাউন্সিলর হিসেবে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে সিরাজগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে
সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতির চার নেতা হত্যার মধ্যদিয়ে
সারাদেশে নেতৃত্ব শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে সিরাজগঞ্জ
জেলা আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৮ সালে
আওয়ামীলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব
পান। সে সময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের প্রার্থী কর্ণেল
এমজি ওসমানীর নির্বাচন এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের
প্রতিটি থানায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন। ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।
১৯৮২ সালে স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্য ফেব্র“যারি ছাত্র
আন্দোলন ও ১৯৮৪ সালের উপজেলা নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন করতে গিয়ে
কারাবরণ করেন আবু ইউসুফ সূর্য। ১৯৮৪ সালে জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার
সম্পাদকের পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে দলের সদস্য পদ গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালের
৭মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের ৭টি আসনে ব্যাপক গণসংযোগ করে এরশাদের
ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টি করে দুটি আসন ছিনিয়ে নেয়ার পেছনে
তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৮৭ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ২২ দলের
নেতত্বে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি করেন। ১৯৯০ সালে ৬ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ
সরকারের পতন ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯২ সালে জেলা আওয়ামীলীগের
যুগ্মসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯৩ সালে খালেদা জিয়ার মাগুড়া
উপ-নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে
মারাত্মক ছুরিকাঘাত করে। কয়েকবার তার বাড়ী ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। ১৯৯৬
সালে ১২ ফেব্র“য়ারী সিরাজগঞ্জে খালেদা জিয়ার আগমন প্রতিহত করার জন্য ব্যাপক
গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ আন্দোলনের কারণে সিরাজগঞ্জ থেকে
অল্পসময়ের মধ্যেই ফিরে যেতে বাধ্য হয় খালেদা জিয়া। ১৫ ফেব্র“য়ারী এক দলীয়
অবৈধ নির্বাচন প্রতিহত করার গণ আন্দোলনে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে বাদ্যযন্ত্র
হিসেবে বাজানো হয় এবং ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেয়া হয় যা ঐ সময় বিবিসি সংবাদ
মাধ্যমে প্রচার করা হয়। কাজিপুর, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে নির্বাচন
প্রতিহত হয়। এর ফলশ্র“তিতে ১৯৯৬ সালে ১২ জুনের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের ৭টি
আসনের মধ্যে ৬টি আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে। এ নির্বাচনে আবু ইউসুফ সূর্য
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৭ সালে আবু ইউসুফ সূর্যকে জেলা আওয়ামীলীগের
কাউন্সিলররা সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত করে। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব
নেয়ার পর ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের
নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি এবং জাতির জনকের ঐকান্তি ইচ্ছা ও তৎকালীন যোগাযোগ
মন্ত্রী এম. মনসুর আলীর আন্তরিক সদিচ্ছায় জাপান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায়
প্রতিশ্র“তি আদায়ের ফলে বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ
বঙ্গবন্ধু সেতু ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ
উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ও
উন্নয়নের এক নব দিগন্তের সুচনা করেন। যার ফলশ্র“তিতে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩বার সিরাজগঞ্জ জেলায় শুভাগমনের মধ্যদিয়ে ঐ বছরের
২৬ ফেব্র“য়ারী হাটিকুমরুল বনপাড়া ৩০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তার কাজ উদ্বোধন
ও বাস্তবায়ন করেন।
আবু ইউসুফ সূর্য জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর
সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন ঐ সময় সিরাজগঞ্জে যত উন্নয়নমুলক
কাজ হয়েছে এতে তার ভূমিকা সিরাজগঞ্জের আপামর জনতা আজও স্মরণ করে। তার
উল্লেখযেগ্য কাজগুলোর মধ্যে-সমগ্র উত্তরাঞ্চলকে বিদ্যুৎ ও শিল্পায়নসহ
সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে বাঘাবাড়ীতে ১৩১ মেঘাওয়াট মাউনটেন্ট বার্জ এবং ৩০
নভেম্বর সিরাজগঞ্জের গ্যাস সঞ্চালন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং সিরাজগঞ্জ
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাহেবের
প্রতিশ্র“তি মোতাবেক সমগ্র সিরাজগঞ্জ জেলায় ব্যাপক উন্নয়নস্বরূপ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে ৪০০ একর জমির উপর
শিল্পপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছন। ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জ
শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, উক্ত বাঁধ এলাকায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ধরে শহীদ
রাসেল স্মৃতি পার্ক নির্মাণ, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০০ আসন বিশিষ্ট
অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শহীদ মনসুর আলী অডিটোরিয়াম, ২০ কোট টাকা
ব্যয়ে শহীদ এম মনসুর আলী সংযোগ সড়ক, যমুনা ভাঙ্গন রোধকল্পে ৬০ কোটি টাকা
ব্যয়ে ৯টি স্পার বেকার যুবকদের জন্য ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যুব উন্নয়ন প্রকল্প
স্থাপন, শাহজাদপুরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে করতোয়া সেতু, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে ৫
কোটি টাকা ব্যয়ে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ ও খোকশাবাড়ীতে কারিগরি
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাসপোর্ট অফিস, আমদানী রফতানি অফিস, টেলিফোন বিভাগীয়
অফিস, শিয়ালকোলে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন সমিতিসহ সিরাজগঞ্জের রাস্তাঘাট এবং
অবকাঠামো ও কৃষি উন্নয়নের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের ৫ বছরে ১২০০ কোটি টাকার
কাজ করর পিছনে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা
আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যত
উন্নয়ন আমার হাত দিয়ে হয়েছে সে অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সিরাজগঞ্জ উপজেলাকে
আধুনিক সিরাজগঞ্জ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য নির্বাচনে সিরাজগঞ্জবাসীর
দোয়া ও সহযোগিতা চাই।
লেখকঃ ফজলে খোদা লিটন
ছবিঃ সোহাগ লুৎফুল কবির
লেখকঃ ফজলে খোদা লিটন
ছবিঃ সোহাগ লুৎফুল কবির