লেখক ও গবেষকঃ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান
নদীর সাথে সম্পৃক্ততা আমার অনেক দিনের কিন্তু নদী বিষয়ে লেখা লেখি অনেক কম। কৈশোরে স্বভাবসুলভ ডানপিটে চঞ্চলতা নদীকেই ঘিরে। এই দুষ্টুমিতে মদদ জুগিয়েছে শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত আর মার্ক টোয়েনের টম সয়ার। সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, নাও বাওয়া সবই ছিল নদী কেন্দ্রিক। বর্ষায় নৌ পথে কুটুম বাড়ি ভ্রমণ ছিল অত্যাবশ্যকীয় কাজ। যৌবনে নদী প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য গবেষণাকল্পে নদীর সাথে পুনর্যোগাযোগ। উল্লেখ্যযোগ্য গবেষণাগুলো যেমন:
নাফ নদী ও সেইন্টমার্টিন্স দ্বীপ জীব বৈচিত্র্য অধ্যায়ন- ১৯৮৪। রাজশাহী পদ্মায় মরিয়াল প্রজনন গবেষণা- ১৯৮৬
মিঠাপানির কাছিম ও সোনগুই জরীপ- ১৯৮৯ এশিয়া পরিযায়ী জলচর পক্ষী সূমারী প্রধান নদীও উপকূল এবং হাওড় অঞ্চল- ১৯৯০-২০০০। হাওড় অঞ্চল জীব বৈচিত্র্য গবেষণা- ১৯৯১ ফ্লাড একশান প্ল্যান-৬ এবং ন্যাশনাল কনজারভেশন স্ট্র্যাটেজি। পার্বত্য এলাকার নদী জীববৈচিত্র্য গবেষণা- ২০০৩। ঘড়িয়াল জরিপ, পদ্মা, যমুনা, তিস্তা- ২০১০। গাঙ্গেয় শুশুক জরীপ সকল নদ-নদী যথাক্রমে ১৯৯১ এবং ২০১০। পদ্মাসেতু সন্নিবেশিত পদ্মা এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর জীববৈচিত্র্য অধ্যায়ন- ২০১৫
ভৈরব থেকে সন্দীপ এবং বরিশালের নদীর জীববৈচিত্র্য অধ্যায়ন- ২০১৬।
এছাড়াও নদ-নদী, হাওড়-বাওড়, হ্রদের জীববৈচিত্র্য ভিডিও চিত্র ধারণ, প্রকৃতি ও জীবন এবং প্রাণ প্রকৃতি অনুষ্ঠান যথাক্রমে চ্যানেল আই ও একাত্তর টেলিভিশনের জন্য।
বর্তমানে 'নদী ও জীবনের সন্ধানে' প্রকল্পের সাথে যুক্ত। এ সকল প্রকল্প গবেষণা কাজের ফলাফল প্রধানতঃ বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা ও প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত। যতদূর মনে পড়ে নদী বিষয়ক ছয় সাতটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে সহজ পাঠ্য হিসেবে।
উল্লেখযোগ্য হলো:
নাফ নদীর প্যারাইল্লাবান্দর সমাচার- আহমদ ছফা সম্পাদিত, চট্টগ্রাম বার্তা। হাওড় প্রাণবিচিত্রা: টাঙ্গুয়ার হাওড়- ফরহাদ মজাহার সম্পদিত, উবিনীগ সংকলন।
নদী জীববৈচিত্র্য- মিজানুর রহমান সম্পাদিত, মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। ইছামতী নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এক সাফল্য গাঁথা, রাশেদা. কে. চৌধুরী সম্পাদিত পরিবেশ কতকথা, গণ সাক্ষরতা অভিযান। Floodplain Ecology of Northeaster Region of Bangladesh.
চুসাফাও, ড:ইউসুফ আলী সম্পাদিত Floodplain Ecology, BCAS of Bangladesh. Our River Heritage সম্পাদিত, জলপ্লাবিত, ভারত।
যখন নদীতে ভাসি তখন অনেক বিষয়ই লেখার অনুপ্রেরণা আসে। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। নদী ছেড়ে নগরে এলেই আর লেখা হয় না। তাই নদীর এত গল্প মাথায় জমে আছে যা আজও প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্নেহাস্পদ মনির হোসেন নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি এবং নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতারা নাছোড় বান্দা। নদী প্রেমিক ও নদী সংরক্ষণের একনিষ্ঠ কর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও অনুপ্রেরণা জোগাতে এই আঁকিজুকি। আমার ঈশ্বরের চারণ ভূমি মানিকগঞ্জের নদী গল্প দিয়েই শুরু।
এদেশের শতাধিক নদীর খণ্ডচিত্র মানিকগঞ্জ নদীর গল্পগাঁথা। এ থেকেই অনুমেয় অপরাপর নদীর গীতগাঁথা। আতুরঘর নদী মোদের, মোরা বড্ডই অকৃতজ্ঞ, পিছন ফিরে থাকি। সময় এখন ঋণ শুধাবার। মুখ ফেরানো সমুখে নদীর। বুনো নদী বন্যতায় ভাসুক নদীতীর হাসুক আবার ফুলে ফলে প্রজাপ্রতির রংধনু ডানায়।
আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকাল নদ-নদীকে ঘিরে আবর্ত। দেশের বাড়ি যথাক্রমে বালিয়া, ধামরাই উপজেলা ওদাশড়া, মানিকগঞ্জ। ধলেশ্বরী নদী তীরে বালিয়া গ্রাম। মানিকগঞ্জ কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর প্লাবন ভূমি বদ্বীপ। খরস্রোতা, স্রোতস্বিনী নদী দুটো আজ মৃত প্রায়। বর্ষায় ক্ষীণ জলধারা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে ধুধু বালু চর। এক সময় বহতা খরস্রোতা নদী ছিল তার সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে কালিগঙ্গা ও ধলেশ্বরী সেতু মানিকগঞ্জের দক্ষিণ ও উত্তরে।
প্রাকৃতিকভাবে মানিকগঞ্জ পদ্মা-যমুনা-ইছামতির আশির্বাদ পুষ্ট উর্বর প্লাবন ভূমি প্রতিবেশ ব্যবস্থা। বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আতুর ঘর। নৌবন্দর হিসেবে খ্যাত মানিকগঞ্জ পুরোটাই ছোট, বড় অনেক নদী-নালা, খাল-বিল দ্বারা আবৃত। দুয়েকটি প্রধান সড়ক বাদে বাকি সবখানে নৌকাই একমাত্র যোগাযোগ বাহন। তাইতো এই এলাকায় নানান বৈচিত্র্যময় নৌকার গড়ন, গঠন, আকার, আকৃতি লক্ষণীয়। এক মাল্লা, দুই মাল্লা, গয়না, পানসী, ছিপ, ডিংগী, ডোংগা, কোষা ও হরেক রকম নাওয়ের সমাহার। এগাঁও ওগাঁও ভ্রমণের জন্য প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ডিংগি বা কোষা নৌকা বাঁধা থাকতো ঘাটে। এ বাড়ি ও বাড়ি আর পাড়া বেড়ানোর প্রধান বাহন মাটির চাড় এবং কলা গাছের ভেলা। বর্ষায় রথ যাত্রার সময় অনেক বড় আয়োজনে নৌকা বাইচ হতো মানিকগঞ্জ শহরের মাঝি দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে।
শহরের মাঝ খাল থেকেই লঞ্চ ছাড়তো ডাকার উদ্দেশ্যে। বেতুলীয়া দিয়ে কালিগঙ্গার শাখা বেয়ে ধলেশ্বরীতে মিলে, সিঙ্গাইর পার হয়ে সাভার সেতুর নিচ দিয়ে হেমায়েতপুর ঘেঁষে। আশুলিয়া বিল পাড়ি দিয়ে আমীন বাজারের কাছে তুরাগ নদীতে পড়তো। মিরপুর ব্রিজ পার হয়ে বুড়িগঙ্গায় সদরঘাটে যাত্রা শেষ হত। এই যাত্রা পথে সাভার বাজারে ফেরীওয়ালা বালতি ভরা রসগোল্লা বিক্রি করতো। লঞ্চের উপরে ছোট কেবিন, বেলকনী, চিমনি ও নামাজের স্থান। নিচ তলায় কাঠের বেঞ্চ, যাত্রী আসন, ইঞ্জিন রুম এবং মহিলা কেবিন। পেছনে দেড় তলায় রান্না ঘর, টয়লেট এবং টি স্টল। লাঠি টোস্ট বিস্কুট, চা, পান এবং বিড়ি প্রধান পণ্য। লঞ্চের ক্যাপ্টেন সুখানী, ইঞ্জিন চালক, টিকিট মাস্টার এবং নৌ শ্রমিক মিলে লঞ্চের ব্যবস্থাপনা।
ভ্রমণ তখন অনেক আনন্দদায়ক ছিল, মহিলারা পানের বাটা খুলে গল্পে মাততো। শিশুরা পুরো লঞ্চেই ছুটাছুটি, লুকোচুরী খেলায় ব্যস্ত। লেছ ফিতা, আলতা, রেশমী চুড়িওয়ালা তার কাচের ভাসমান দোকান প্রদর্শন ও বিক্রয় করতো। লঞ্চের ছাদে চটের ছালা ও বাঁশের খাঁচায় ভরা পনির, মাছ, পান, মুরগি, হাঁস এবং ডিম এই রকম নানান কাঁচামাল ভরা থাকতো।
বিশ পঁচিশ স্টপেজ করে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা লঞ্চ বহর সম্পূর্ণই কাঠের তৈরী এবং দোতলা একই আদলের যা সমগ্র ভারতবর্ষেই নৌ পরিবহন হিসাবে ব্যবহৃত হত। এছাড়াও মানিকগঞ্জ বেউথা বন্দর কালিগঙ্গা হতে স্টিমার যেতো ঢাকায়। ঐ জাহাজগুলো দোতালা এবং কয়লা চালিত। প্রতি রাতে ছেড়ে ভোর বেলা ঢাকার সদরঘাট নৌবন্দরে পৌঁছাতো। স্টিমার ভ্রমণ ছিল খুব নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক। রাতে চাদর, কাঁথামুড়িতে এক ঘুমে ঢাকা পৌঁছানো। স্টিমার পরিবেশিত খাবার ছিল খুব সুস্বাদু এবং সুলভ। ইলিশ ঝোল, কাঁচকি মাছের চচ্চরি, বেগুন ভাজি এবং ডাল। বোম্বে টোস্ট, লুচি-মিষ্টি, ডিম-রুটি নাস্তা হিসেবে বেশ মুখরোচক। যাত্রী বহনের পাশাপাশি স্টিমার ব্যাপক কাঁচামাল বহন করতো- যার মধ্যে পনির, দুধ, দই, গুড়, মাছ, হাঁস-মুরগি, ডিম এবং শাক-সব্জি প্রধান। কালিগঙ্গা বেয়ে বালির ট্যাংক পেরিয়ে ধলেশ্বরী ও ইছামতি হয়ে মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যা মোহনা পাড়ি দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পৌঁছাতো ভোর বেলা। তখন নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার সড়ক বাতির হলদে মালা এক অপরূপ মায়াপুরির মতন লাগতো।
মানিকগঞ্জ আরিচা ঘাট হতেও স্টিমার চলাচল করত গোয়ালন্দ পর্যন্ত। সেখান হতে ট্রেনে চেপে বেনাপোল হয়ে কোলকাতা। মানিকগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর ও পাবনা জেলা যা পদ্মার এপার ওপারে অবস্থিত ঐতিহাসিকভাবে পাট উৎপাদন ও বিতরণের জন্য বিখ্যাত ছিল। পদ্মা-যমুনা, ইছামতি, আড়িয়ালখাঁ ও ধলেশ্বরী নদীভিত্তিক পাট পরিবহন ও বাজারজাতকরণ ছিল এক বিশাল কর্মযজ্ঞ এবং বাণিজ্য। পাট আঁশ পরিবহন চলতো দ্বি-মুখী।
এক: প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ, দুই: কলকাতা- এই দুই স্থানেই গড়ে উঠেছিল সকল বড় পাটকল/কারখানাগুলো।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর-শিবালয় এবং ফরিদপুর পাংশা সন্নিবেশিত পদ্মায় পাঙ্গাস-আইর মাছের অভয়াশ্রম ছিল। টন হিসাবে পাঙ্গাস ধরা হতো নদীর কুমগুলোতে। নদীর প্রাকৃতিক পাঙ্গাস ১০-৪০ কিলোগ্রাম ওজনের এবং বিশালাকৃতির হতো। পাটুরিয়া এবং বাহাদুরপুর এলাকায় ইলিশ মাছের প্রাচুর্য এবং পর্যাপ্ততা ছিল ব্যাপকাকারে। আরিচার জাফরগঞ্জ হতে শিবচরের আড়িয়ালখাঁর মুখ পর্যন্ত পদ্মারচর সমূহে বিচরণ করতো হাজারো জলচর পরিযায়ি পাখি। শীতের ভোরে চরবাসীদের ঘুম ভাঙতো পাখির কলরব এবং ডানা ঝাপটার শব্দে। চরের বালুতে রোদ পোহানোর জন্য বসে যেতো গঙ্গা কাছিম আর ঘড়িয়াল। অসংখ্য গাঙ্গেয় শুশুক সহজলভ্য ছিল মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ লৌহজং এর মাঝে বয়ে যাওয়া পদ্মায়। কিন্তু গত ২০১৫-২০১৬ সময়ে পদ্মা নদীর মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারিপুর এবং মানিকগঞ্জ, হরিরামপুর, শিবালয় সন্নিবেশিত পদ্মায় জীববৈচিত্র্য জরিপকালে জানা যায় যে বিগত ৫ দশকে কিছু প্রাকৃতিক পরিবর্তন লক্ষণীয়-
১। পদ্মার গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে ব্যাপকাকারে
২। জলের হিজল বন বিলুপ্ত প্রায়, হাসাইল এলাকায় ছিটে ফোঁটা লক্ষ করা যায়
৩। নদীর নাব্যতা হানি হয়েছে ৭০ শতাংশ
৪। পরিযায়ী জলচর পাখির উড়াল পথ বজায় আছে তবে পাখির সংখ্যা কমেছে ৬০ শতাংশ
৫। নল খাগড়া ও শন বন জীববৈচিত্র্য পুনরুত্থান লক্ষণীয়
৬। স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত হয়েছে ঘড়িয়াল ও পিপলা শোল মাছ
৭। পাঙ্গাস-আইর মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হয়েছে ব্যাপক আকারে
৮। প্রজাপতি, মথ, ঝিনুক, শামুক, প্রজাতি প্রাপ্ততা স্বাভাবিক রয়েছে।
৯। নদী বা তীর ভাঙন প্রবণতা প্রকট। আরিচা, পাটুরিয়া, হরিরামপুর, ভাগ্যকুল ও লৌহজং এলাকার অনেক গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
১০। মৎস্য উৎপাদন কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
১১। ইলিশের পরিযায়ন পথ সঙ্কুচিত হয়েছে এবং গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে।
১২। রবি শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এবং মৌচাকের আধিক্য লক্ষণীয়।
১৩। শীত মৌসুমে ক্ষীণ জলধারা আর বিস্তীর্ণ বালুর চর।
মানিকগঞ্জের নদী-খাল-বিলের অবস্থার বর্ণনা থেকে এটি অনুমেয় যে গত ৪-৫ দশকে এদেশের নদ-নদীর প্রভূত ক্ষতি সাধন হয়েছে। যার একটি কারণ প্রাকৃতিক পরিবর্তন অপরটি মানব সৃষ্ট। বাংলাদেশে বহমান প্রধান নদী সমূহের উৎস মুখে জলবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য ব্যারাজ নির্মাণ (অর্ধশতাধিক) এবং রেলসেতু নির্মাণকালে নদী শাসন মূলত ভাটির দেশের নদীর প্রাকৃতিক জল প্রবাহে প্রথম খড়্গ। মরহুম জননেতা এবং প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ মওলানা ভাসানী বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মার্চ করেন। যা ছিল জল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিকী প্রতিবাদ।
দেশাভ্যন্তরে শুরু হলো সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়ন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এই অঞ্চলের নদী ও এর প্লাবন ভূমি, জলাভূমির উভয়মূখী জল প্রবাহ ও জলসঞ্চালনের প্রথম প্রতিবন্ধকতা। শুরু হলো আইয়ুব খান, তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসকের 'নয়া সড়ক' ও 'সবুজ বিপ্লব' প্রকল্প। একদার নৌ-প্রধান যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা রূপান্তরিত হলো সড়ক যোগাযোগ। সারা দেশে নদী হারালো তার প্লাবন ভূমি। জলাভূমির সাথে বর্ষাকালীন সংযোগ প্রতিটি সড়ক এক একটি বাঁধজলাভূমি ও নদী প্রবাহের মাঝে। নদী ও জলাভূমির মাঝে পরিযায়ী, প্রাণী ও উদ্ভিদ কূলের স্থানীয় migration পথ হলো রুদ্ধ। তার বেলাও কাপ্তাই সহ ৬ ডজন খানেক (Dam) তৈরী হলো প্রধান নদী সমূহের গতি পথ বন্ধ করে জলবিদ্যুত প্রকল্প।কাপ্তাই উৎস জলাবদ্ধতার জন্য কর্ণফুলী নদীর সকল উপত্যকা এবং প্লাবন ভূমি স্থায়ীভাবে কৃত্রিম হ্রদে পরিণত হলো। হাজারো পাহাড়ি জনগোষ্ঠি হারালো তাদের উবর্রকৃষি ও মৎস্যভূমি। আপন ভূমি হতে মূলোৎপাটিত হয়ে পরিণত হলো পরিবেশগত শরণার্থীতে (Environment Refugee) উপত্যকার সকল জনগোষ্ঠি বসতি গাড়লো নিকটবর্তী পর্বতশৃঙ্গে। শুরু হলো প্রাকৃতিক চিরহরিৎ বন বিনাশ ধ্বংসযজ্ঞ। ক্রমান্বয়ে নাঙা হতে থাকলো পাহাড় শ্রেণী। শুরু হলো জীববৈচিত্র্যের স্থানীয় বিলুপ্তি। শুরু হল পাহাড়ধস আর বান ভাসি। পাহাড়ি নদীসমূহ হারালো তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ।
মানব বসতি, বিকাশ, বিস্তার ও উত্তরণ বিষয়ে বিশেষত: নদীমাতৃক ও প্লাবন ভূমি এলাকার সভ্যতা নিয়ে আমার নিজস্ব ভাবনা ও বিশ্লেষণ আছে। ভাটির দেশ বাংলাদেশ। উত্তরে সুউচ্চ পর্বতমালা, উপত্যকা ও নদী প্রবাহের আধার সাগরের মাঝে অবস্থিত আমাদের দেশের প্রধান ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হলো বদ্বীপ বা চর। আর এই চরের বাসিন্দা 'চইরা'। চর খুবই ভঙ্গুর প্রতিবেশ ব্যবস্থা এবং ক্ষণস্থায়ী। নদ-নদীর ভাঙ্গা গড়ার সাথে চর উৎপত্তি ও বিনাশ। পৃথিবীর প্রাচীন এলাকার মতন স্থায়ী ভূ-প্রকৃতি যেমন কঠিন শিলা বা খনিজ সমৃদ্ধ পাথুরে পর্বত বা সমতল ভূমি নয় আমাদের এই ভূ-খন্ড।
Geological Time Scale অনুযায়ী- পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটিত নানান ঘটনা এবং রূপান্তর ও বিবর্তন জানার একটি পদ্ধতি এই মাপকাঠি ও মানদণ্ড যা বর্ণনা করে বিশ্বব্রহ্মান্ডের ভৌগলিক, ভূ-তাত্ত্বিক ও তাতীর মন্ডলীয় বিজ্ঞানকে। এই মাপকাঠির মাইলফলকগুলো এই রূপ: সুপার ইয়ন, ইযন, এরা, পিরিয়ড, ইপক এবং এজোজ। এগুলোকে তিনটি এককে বর্ণনা করা হয় আরলি, মিড এবং লেট সময়কাল বিবেচনায় আর শিলা বিস্তার বিবেচনায় ধরা হয় লওয়ার, মিডিল এবং আপার এই শ্রেণীতে।
প্রাণের উৎপত্তি ও বিবর্তনে ব্যবহার করা যায় সেনোজোইক, মেসোজোইক, প্যালিও জোইক এবং প্রি-ক্যাম্বিয়ান মাপকাঠিতে। মাপকাঠির সময় দূরত্ব/ব্যবধানগুলো ইত্তম-অর্ধবিলিয়ন বর্ষাধিক, এরা-কয়েক শতক মিলিয়নবর্ষ, ইপোক- দশ মিলিয়ন বর্ষ এবং এজ হলো- মিলিয়নবর্ষ। এন্ট্রোপসেপিক বর্তমান ইপোককে ধরা হয় যে সময়ে আমরা অবস্থান করছি।
হিমালয় উত্থান এবং নদীর উৎপত্তি, প্রবাহ, শ্রোতধারার গতিপথ পরিবর্তন সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করে নদী ভিত্তিক নৃ-তাত্ত্বিক বিবর্তন জানার গবেষণা প্রয়োজন, গন্ডোওয়ালা ল্যান্ড বিচ্যুতি ও হিমালয় সূষ্টির পূর্বে এই ভূ-খন্ডে নদীর উৎস ও বিস্তার আতলন্তেই রয়ে গেছে। তৎকালীন নদী প্রবাহ হয় তার সাগর উৎসাধিত এবং উত্তরমুখি। সেই বিবেচনায় বাংলা বদ্বীপ অধুনা সৃষ্ট এবং ক্রম বিকাশমান ভূ-ভাগ। ভাঙা-গড়ায় অস্থিতিশীল এক অবস্থানে অবস্থিত এই বদ্বীপ।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বর্ষ পূর্বে সৃষ্ট যখন গন্ডোওয়ালা ল্যান্ড অস্ট্রেলীয়া হতে বিচ্যুত হয়ে বার্মা ও ইউরেশীয় প্লেটের সাথে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষ হলো ৪ হাজার বর্ষ পূর্বে। তখন সুষ্ঠু হিমালয় পর্বতমালায় উৎসারিত হলো গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র। ভূ-তাত্ত্বিক বিবর্তন এবং জলজ প্রবাহ প্রণালী বিশ্লেষণের সাথে সংযুক্ত করা প্রয়োজন প্রাণীকূল বিশেষত মানব সমাজের বিকাশ ও বিস্তারকে। যেমন- এই বদ্বীপে বসবাসরত নদীভিত্তিক জনগোষ্ঠির জীবন প্রণালী।
কৈবর্ত্য: নদী ও জলাভূমি জীবনযাত্রা, প্রণালী, নৌযান এবং জল-ফাঁদ গঠন, গড়ন প্রকৃতি। মালো: জলজ জীবন যাপন ও ভোদড় ব্যবহারে মাছ শিকার। রাজবংশী: হরেক রকমের জাল ও মাছ রাখার আধার, পাত্র গড়ন কৌশল। কুমার: কুমার মাটি ও মৃৎশিল্প চইরা: খড়-কোটা, পাটকাঠি,বাঁশ-বেতের গৃহনির্মাণ কৌশল। মাঝি: হরেক রকম নাও নির্মাণ ও চালানো কৌশল। বেদে: নদীতে ভাসমান জীবনপ্রণালী ও কলাকৌশল। জলমহল, হিজলমহাল, বালুমহাল, গরুবালা ইত্যাদি নদী ও জলাভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্বতি। জারি-সারি,ঘাটু,ভাটিয়ালি,পল্লী সংগীতের উৎস, তাল, লয়, সুর, বিষয় প্রণালী যাত্রা, কবিগান, পালাগান উৎপত্তি ও নদ-নদীর সাথে সম্পৃক্ততা
উপরোল্লিখিত চলমান উপাদানসমূহ গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে এতদঅঞ্চলের মানুষ ও সমাজ বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্যসংগ্রহ করা প্রয়োজন। রেডিও মেট্রিক ড্যটিং অনুযায়ী পৃথিবীর উৎপত্তি ৪,৫৭০ বিলীয়ন বছর পূর্বে আর (৪৫০ কোটি) নদী সৃষ্টি হয় প্রায় ৩০০ কোটি বছর পূর্বে। এই ভূখন্ডে নদীর উৎপত্তি দ্বিমুখী: এক- পর্বত শৃঙ্গ, দুই- সাগর।
এতদঅঞ্চলের নদ-নদীর উৎপত্তি নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছাড়াও রয়েছে-নানান রকমের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উপাখ্যান। ভারতীয় শাস্ত্রে পূজিতা নদী গঙ্গাকে নিয়ে রয়েছে অনেক উপাখ্যান। যেখানে নদীকে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল ত্রিভুবনের সাথে যুক্ত করে গঙ্গা দেবীর রহস্যময়ী ঘটনাবলি চিত্রায়িত আছে। যেখানে পাত্র পাত্রী হিসাবে উল্লেখ আছে সাগর রাজা, সুমতি রানী, কপিল মুনি, ভগীরথ, শিব, সীতা, নলিনী, সুচক্ষু, ভগীরথী। জহ্নুগঙ্গাকে বর্ণনা করা হয়েছে হিমালয়ের কন্যা, কখনো শিবের স্ত্রী, কখনো জাহ্নবীর ভালবাসার কাঙ্গাল, আবার কখনো বা শ্রী কৃষ্ণের প্রণয় প্রার্থিনী।
প্রবন্ধকার তপন কুমার দাস ২০০৫ সালে উল্লেখ করেছেন যে এই রূপ জন্মকথা রচিত হয়েছে স্বরস্বতী, ব্রহ্মপুত্র, নর্মদা নদীকে ঘিরে। মহাভারতে রয়েছে নদীর ছড়াছড়ি। যেমন: তমশা, কৌশিকি, শুভদ্রা, কাঞ্চনাক্ষি এবং পদ্মাবতী ইত্যাদি। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন নদ ও নদীর বিভাজন তৈরী হয়েছে প্রাচীন গ্রন্থসমূহে। পুরুষ দেবতার মাধ্যমে জন্ম নেয়া স্রোতধারাকে নদ আর নারীর নামে কিংবা নারীর দ্বারা সৃষ্ট স্রোতধারাকে নদী বলা হয়েছে। যেমন: নীলনদ, একিসনদ, ব্রহ্মপুত্র নদ, কপোতাক্ষ নদ, মিসিপিপি নদ।
গঙ্গানদী, গোমতী, মধুমতি, কাবেরী, ইছামতি, ধানসিঁড়ি, ধলেশ্বরী নদী, পদ্মা নদী, যমুনা নদী বদ্বীপ অঞ্চলের পুরাকীর্তি অনেকাংশেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বরেন্দ্রভূমি এবং উঁচুটিলা এবং পার্বত্য এলাকায় কিছু পুরাকীর্তি অক্ষুণ্ণ আছে। এছাড়া অধুনা ইতিহাসের কিছু স্থাপনা ও ভাষ্কর্য রয়েছে সমতটে। আমাদের ইতিহাসবিদগণ মূলত: ঐ সকল পুরাকীর্তি, স্থাপনা ও ভাষ্কর্য ইতিহাস বিশ্লেষণের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু এতদ অঞ্চলের মানুষের জীবন-যাত্রা ও প্রণালীর মাঝে নিহিত সাংস্কৃতিক, নৃ-তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় উপাদানসমূহ তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি ইতিহাস রচনায়। এই ইতিহাস রচনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং রাজ-রাজাদের শাসন, শোষণ ও প্রতাপের। ইতিহাস রচনায় প্রাকৃতিক ইতিহাস (Natural History) একেবারেই অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
ভৌগলিক, ভূ-তাত্ত্বিক, জীবভূ-বিজ্ঞান, জলবিজ্ঞান এবং জীববৈচিত্র্যের উৎপত্তি, অভিযোজন, বিস্তার, বিকাশ ও বিনাশের প্রাকৃতিক বিবর্তন বিষয়ক সূক্ষ্ম উপাদানসমূহ বিশ্লেষণের দাবি রাখে বদ্বীপ অঞ্চলের সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস জানার জন্য। নদী ও নদীর সম্পদ ব্যবহার চলছে অবিরাম। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ব্যবহার অমিতব্যয়ী এবং অপরিণামদর্শী। নদী ব্যবস্থাপনায় একপেশে দৃষ্টি নদী সুরক্ষার একটি অন্তরায়। কেহ নদীর ভূ-উপরিস্থিত জল উত্তোলন এবং ফসলে সেচ প্রদান এই লক্ষে নদী ব্যবস্থাপনাকে দেখে। আবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বাঁধ-ভাঙা রোধ এই আঙ্গিকে কাজ করে অনেকে।
নদী খনন ও নৌ চলাচল নাব্যতা বজায় রাখতে অনেকে ব্যস্ত। মাছ আহরণ ও মাছপ্রজনন এবং পরিযায়ন বিষয়ে কেহ কাজ করেন। নদী দূষণ এবং প্রতিকার নিয়েও কর্মদ্যোতা রয়েছে। নৌ-পরিবহন ও নৌ-পরিভ্রমণও একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড নদীকে ঘিরে। বালু মহাল, জলমহাল, জলজ সম্পদ আহরণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
নদী এমন একটি জীবন্ত এবং বহমান প্রতিবেশ ব্যবস্থা যা সংরক্ষণে বহু জ্ঞান-শৃঙ্খলা ও বহুমুখী কর্মযজ্ঞ সু-সমন্বিত কর্মযোগের দাবী রাখে। সার্বিক সমন্বয়, পারস্পরিক জ্ঞান আদান-প্রদান ভিত্তিক সূদুরপ্রসারী বৈজ্ঞানিক স্বমন্বিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের নদ-নদীর ব্যবস্থাপনার একপেশে নীতি পরিহার করা অতীব জরুরী। আমরা মোটা দাগে আমাদের নদ-নদীর প্রধান সমস্যাগুলো কম বেশি জানি। এই চিহ্নিত সমস্যা সমাধানকল্পে আমাদের পরিকল্পনা, আইন এবং সংগঠন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই নদী-সুরক্ষার পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। সাংগঠনিক দক্ষতাও যুগোপযোগী নয়। চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
যেমন:
১. নদী ও জলাভূমি সংরক্ষণ ও সুষম উন্নয়ন বিভাগ যা আন্ত:বিভাগীয় নীতির সমন্বয়, উন্নত গবেষণা, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তদারকি ও মূল্যায়ন করবে।
২. আন্তর্জাতিক নদী ও জল প্রবাহ ও আঞ্চলিক নদী ব্যবস্থাপনা সনদ, চুক্তি, প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় কর্মকৌশল ও কূটনীতি চৌকস করা।
৩. নদী ও জলাভূমি বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা যা NCS, NEMAP, NBSAP, BCCSAP সহ অন্যান্য কর্মপরিকল্পনায় লক্ষ নির্ধারিত আছে তা বাস্তবায়ন।
৪. আন্তর্জাতিক সনদ যেমন CBD, CMS, Ramsar - বাংলাদেশ যার অনুস্বাক্ষরকারী, অংশীদারি দেশ তার সকল বিধিবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন।
৫. SDG লক্ষ্যমাত্রা যা নদী সাগর ও জলাভূমি কেন্দ্রিক তা জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের কৌশলপত্র এবং লক্ষ্যমাত্র, কর্মসূচী, সময়সূচী নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন।
৬. Transboundary river Management regional & Bilatenal Protocol লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন।
৭. Polluters to Pay এই আইনের ভিত্তিতে শিল্প কর্তৃক দূষণ রোধে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন।
৮. পরিবেশ ও নদী দূষণকারী শিল্পের পণ্য বর্জন আন্দোলন।
৯. বে-আইনিভাবে বালু উত্তোলন রোধ করুন।
১০. নদী তীর সীমানা নিরূপণ এবং নূন্যতম ২০০ মি. নদী তীর জলার বনায়নের আওতায় আনা।
১১. নৌ-পরিবহন যান কর্তৃক সকল দূষণ নিয়ন্ত্রণ।
১২. নদীতীরে অপরিকল্পিত এবং প্রকৃতি বৈরী সকল বাঁধ ভাঙ্গা ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
১৩. নদীর জলোত্তনে পরিমিত ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন।
১৪. নদীতে জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কল্পে নদী অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা।
১৫. নদীভিত্তিক পর্যটনের নীতিমালা প্রণয়ন।
১৬. নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমাজভিত্তিক যৌথ কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
১৭. নদী ও হাওর-বাওড় বিলের সংযোগ পুনর্বহাল করা।
১৮. নদী রক্ষা বিষয় শিক্ষা, গবেষণা, সচেতনতা, প্রচার, প্রকাশ, কার্যক্রম জোরদার করা।
১৯. বর্ষা মৌসুমের জলধারণ কল্পে নদী তীরবর্তী সুবিধাজনক স্থানে কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি করা।
২০. জোয়ার-ভাটার নদীর চরাঞ্চল ও নদীতীর ম্যানগ্রোভ বনায়নের আওতায় আনা।
সর্বোপরি আমাদের নদীমুখী হতে হবে। নদী আমাদের জীবন সাথী, অকৃত্রিম বন্ধু। তাই হই বন্ধুসুলভ।