সততার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এখানে দিতে এসেছি। রক্ত দিয়েছি। বাবা-মা, ভাই, ভাইদের স্ত্রীদের আর এখন জীবনটা বাজী রেখেছি কেবল একটাই কারণে এই বাংলাদেশটা যেন স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে উন্নত-সমৃদ্ধ হয় এবং বিশ্বের দরবারে মর্যাদার সঙ্গে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি সততার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মুত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবন বাজি রেখে আমি কাজ করছি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই আমার সরকারের মূল লক্ষ্য।’
জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামক সংস্থার দু’টি গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কিত এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ধন সম্পদ মানুষের চিরদিন থাকে না, মানুষকে মরতে হয়। সব রেখে চলে যেতে হয়। তবুও মানুষ অবুঝ। সম্পদের লোভে সে অস্থির হয়ে পড়ে এটা ঠিক। এটা মানুষের একটা স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তিটাকে যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেই পারে দেশকে কিছু দিতে, জনগণকে দিতে। আমরা এখানে দিতে এসেছি।’
‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামক সংস্থার গবেষণায় ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে তারা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের ৩য় সৎ সরকার প্রধান হিসেবে এবং বিশ্বের ৪র্থ কর্মঠ সরকার প্রধান হিসেবে অভিমত দিয়েছে। সবচেয়ে সৎ সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের তালিকার শীর্ষে জার্মানীর চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল এবং দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। অন্যদিকে কর্মঠ সরকার প্রধানের তালিকায় শেখ হাসিনা রয়েছেন ৪র্থ স্থানে। এরআগে চীন, ইরান এবং তুরষ্কের রাষ্ট্র প্রধানরা রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি এখনও বলব কি পেলাম কি পেলাম না সে হিসেবে মেলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে স্বীকৃতি দিল কে দিলনা সে হিসেবটাও আমার নাই। আমার একটাই হিসাব- এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কতটুকু কাজ করতে পারলাম।
তিনি বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই গবেষণায় যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের দেশে জনসংখ্যা কত? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কত? এটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন তাহলে হয়তো হিসেবটা পাল্টে যেত। কারণ আমাদের মত প্রতিকুল অবস্থার মধ্যদিয়ে তাদের চলতে হয়নি। কেউ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়নি বা তাদের কাউকে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রেখে হত্যার চেষ্টাও হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় কথা- আমাদের ক্ষুদ্র ৫৫ হাজারের কিছু বেশি বর্গমাইলের ভুখন্ডে ১৬ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। তারপরও তালিকার শীর্ষে যারা রয়েছেন তাদের কিন্তু বাবা-মা বা আপনজন হারাতে হয়নি। অত্যাচারিত-নির্যাতিত হতে হয়নি, জেলের ভাত খেতে হয়নি, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এমনটি তাদের উপর এতবারের প্রাণঘাতি হামলাও হয়নি। কিন্তুু আমাদের দেশের পরিবেশটাই আলাদা।
তিনি বলেন, আমি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবন বাজী রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে নিজের জীবনে অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা- কি আছে না আছে ঐটা নিয়ে আমি কখনও চিন্তাও করিনা। ঐটা নিয়ে আমার কোন চিন্তা বা দুশ্চিন্তা নাই। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, জীবনতো একভাবে না একভাবে চলেই যাবে।তিনি বলেন, যত নেতাদের জরিপ করা হয়েছে তার মধ্যে আমাকেই কেবল বাবা-মা, ভাইদের হারিয়ে শরণার্থী হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে। কাজেই এমন অভিজ্ঞতাও তাদের নাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও কখনও অব্যাহত ছিল না। প্রতিবারই বাধা এসেছে এবং আমাদেরকে পুনরায় আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে এবং সেই গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যদিয়েই আজকে দেশের এই উন্নতি।
দৈনিক ১২-১৪ ঘন্টা তিনি কাজ করেন গবেষণায় আসা এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ ঘন্টা-১৪ ঘন্টা কাজের প্রশ্ন নয়, অনেক সময় এমনও দিন যায় যে রাতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারি না। যখনই কাজ আসে তখনই কাজ করতে হয়। সেটা আমরা করে যাই মনের টানে। আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন । তাঁর একটা স্বপ্ন ছিল এই বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত ভাবে গড়ে তুলবেন। তিনি দেশ স্বাধীন করে সেই পদক্ষেপও নিয়েছিলেন। কিন্তুু সম্পন্ন করে যেতে পারেন নি। বিপদগামী একদল ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে এবং গোটা পরিবারকে। একটাই চ্যালেঞ্জ-যে কাজটা আমার বাবা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি সেই অসম্পূর্ণ কাজটা আমি সম্পন্ন করতে চাই।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবুও আমি বলব, এই হিসেব-নিকেশ যারা করেছেন। তাদের মত করে তাদের অভিমত দিয়েছেন। তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই। ব্যক্তিগত না হলেও সরকারের কিছু দুর্নীতির কারণে প্রধানমন্ত্রী তালিকার আরো উপরে কথার কথা থাকলেও তৃতীয় হয়েছেন প্রশ্নকর্তার এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন চালু, যে দেশে গণতন্ত্রের অভাব, যে দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকে। সেদেশে দুর্নীতিটার শিকড় গেড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর পর থেকে ২১ বছর কিন্তুু আমাদের দেশে সেই অবস্থাটাই চলেছে। এরপরে আবার ২০০১-২০০৮ (জামায়াত-বিএনপি জোটের শাসন) পর্যন্ত এই অবস্থা। ঐরকম একটা অবস্থা অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে আমি কি পেয়েছি। পেয়েছি সামরিক স্বৈরশাসন, সামরিক আইন, অনিয়ম, অবিচার, অত্যাচার যার ফলে সেই দুর্নামের এখনও ভাগীদার হতে হচ্ছে। তবে, হ্যাঁ আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি। আর একটা কথা মনে রাখবেন মাথায় পচন ধরলে সারা শরীরেই ধরে। যেহেতু মাথায় পচন ধরে নাই সুতরাং শরীরের কোথাও যদি এক আধটু ঘা-টা থাকে সেগুলি আমরা সেরে ফেলতে পারবো।
সরকার প্রধান বলেন, ঐ রকম যদি দুর্নীতি হত তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি ৭ দশমিক ২৮ ভাগ এবং জনগণের মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হত না। এতবড়ো বড় রাস্তা-ঘাট, স্থাপনা এত স্বল্প সময়ে আমরা করতে পারতাম না। এই দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই পদ্মা সেতু আমরা নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করছি। আমরা সেই চ্যালেঞ্জটা দিতে পেরেছি। এখানে সততারই শক্তি, সততারই জোর-এটা প্রমাণিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে দিতে এসেছি। রক্ত দিয়েছি। বাবা-মা, ভাই, ভাইদের স্ত্রীদের আর এখন জীবনটা বাজী রেখেছি কেবল একটাই কারণে এই বাংলাদেশটা যেন স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে উন্নত-সমৃদ্ধ হয় এবং বিশ্বের দরবারে মর্যাদার সঙ্গে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনটি যারাই করুক তাতে আমার দেশের সম্মান বেড়েছে এটাই পাওনা।