বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ঘিরে অনেক সমস্যা

আলম বায়হান: সাংবাদিক:
একটি জাতি নিধনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার চরম বর্বরতার শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা। ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে আসার সূচনা লগ্নে বাংলাদেশ তাদের বাঁধা দেয়। অনেককে পুশব্যাকও করা হয়। কিন্তু তিন দিনের মধ্যেই হঠাৎ করে অবস্থান পাল্টে ফেলে বাংলাদেশ। মানবিক কারণে বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এর পর তীব্র হয় বাংলাদেশমুখি রোহিঙ্গা ¯্রােত; তা যেনো আর থামছেই না। এ নিয়ে সৃষ্ট হয়েছে নানামুখি সমস্যা ও আশংকা।
একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার যুক্তি হিসেবে রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে মিয়ানমার আখ্যায়িত করছে বাঙ্গালী বলে, সন্ত্রাসীও বলছে তাদের। আর ২০ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অং সান সুচি আরো এক ধাপ বাড়িয়ে কথা বলেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সুরেই। তার ভাষায় তিনি জানেনই না, মুসলমানরা কেন পালিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশের সামগ্রিক এ বর্বরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিপন্ন মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য বিশ্ব জনমতের বিচারে প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশ; নিন্দিত হচ্ছে মিয়ানমার। শরনার্থীদের জন্য বিভিন্ন দেশ যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, তেমনই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলছে নানান ব্যবস্থা গ্রহনের আলাপ আলোচনা এবং প্রস্তাবনা; হয়েছে গণ আদালতের রায়ও।
এদিকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভা শেষে হাটাপথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এ কথা পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ঘটা করে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়টার্সকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাহায্য আশা করেন না। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; তার কথা একশ’ ভাগ খাঁটি। কিন্তু তা প্রকাশ্যে বলা কূটনৈতিক কৌশলের বিবেচনায় কতটা যথার্থ তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। বলা হয়, কূটনীতিতে সংবেদনশীল বিষয়গুলো গজদন্তের মতো প্রদর্শন করা হয় না।
নানান আশংকার ভিড়েও এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, ট্রাম্পের বায়বীয় আশ্বাস আমলে না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঠিক কাজটিই করেছেন। কেবল ট্রাম্প বলে কথা নয়; ইতিহাস বলে, যুক্তরাষ্ট্র যা বলে তার উল্টোটা করে প্রায় ক্ষেত্রেই। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ এর প্রমান। আর আশ্বাস দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি করে তার উদাহরণ ৭১ সালেও আছে। বিপর্যস্ত পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য সপ্তম নৌ-বহর পাঠাবার ঘোষণায় বিশ্বাস করে পাকিস্তানী মাথামোটা সামরিক জান্তা কি ধোকা খায়নি? মার্কিন সপ্তম নৌ-বহরকে বাঁচার শেষ ভরসা হিসেবে বিবেচনা করে পাকিস্তনীরা বলতো, “আতা হ্যায়।” কিন্তু সপ্তম নৌ-বহর আর আসেনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেই রকম একটি ইলিউশনে সময় নষ্ট করেননি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু অন্য বিষয়ে সমস্যা প্রকট।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রথম সংকট স্থান সংকুলানের বিষয়টি। কোন বিবেচনায়ই দশ লাখ লোকের বসবাসের জন্য স্থান নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়; বিশেষ করে বাংলাদশের মতো অতি ঘনবসতির দেশের জন্য। ফলে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা মানুষ তাদের মতো করে স্থান বেছে নেবেই। এর প্রাথমিক প্রভাব হচ্ছে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন। উখিয়ার কুতুবপালং থেকে শুরু করে টেকনাফের মুছলি পর্যন্ত ছোট-বড় শতাধিক পাহাড় এখন রোহিঙ্গাদের জবর দখলে। বনবিভাগের হিসেব মতে চার হাজার একর পাহাড় কেটে রোহিঙ্গা বসতী স্থাপন করা হয়েছে। আশেপাশের সমতল এলাকা ধরলে এর পরিমান ছাড়িয়ে যাবে দশ হাজার একর। মাথা গোজার ঠাই তৈরীর প্রয়োজনে পাহাড়-সমতলের গাছপালা-গুল্ম লতা এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন। এর চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, অই এলাকার পাহাড়গুলো বালুময় ও ঝুরঝুরে। কাজেই পাহাড় ধ্বসের আশংকা বহুগুণ বেড়েগেছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে। একই সঙ্গে নাজুক হয়ে পড়েছে কক্সবাজার সুমুদ্র সৈকতের ভবিষ্যত এবং অনেক সম্ভানাময় বিনিয়োগ।
বিপন্ন মানুষের মাথা গোজার প্রয়োজনে পাহাড় কাটার মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকছে না। এদিকে সরকার নির্ধারিত স্থানে থাকছেন না রোহিঙ্গারা। বিপন্ন মানুষ নিজেদের মতো করে স্থান বেছে নিচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফলে এক পর্যায়ে বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ার আশংকা মোটেই অমূলক নয়। স্বল্প মজুরীতে পাওয়া যাবে বলে এদের চাহিদাও আছে। ফলে প্রাথমিকভাবে গৃহকর্মী ও হোটেল-রেস্তোরায় এরা সহজেই কাজ পেয়ে যাবে। আবার এক পর্যায়ে এরাই জড়িয়ে পড়বে নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। এ সব বিবেচনা করেই হয়তো রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া না দেয়ার আহবান এবং ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আটক করে নির্ধারিত স্থানে ফিরিয়ে দেয়ার কসরত করছে প্রশাসন। কিন্তু এ কসরত হাস্যকর। কারণ এভাবে মানুষ আটকানো যায় না। যে রোহিঙ্গারা একটি বর্বর বাহিনীর গুলী ও মাইন উপেক্ষা করে এক দেশ থেকে আর এক দেশে আসতে পেরেছে, তাদেরকে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া ঠেকানোর উদ্যোগ ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে হচ্ছে।
যে রোহিঙ্গারা প্রান ভয়ে দেশ ছেড়েছে, তাদের প্রাণ বাঁচাতে এখন খাদ্যের প্রয়োজনীয়তাই প্রধান। কিন্তু এটি খুবই কঠিন কাজ। দশ লাখ বুভুক্ষ মানুষের খাবারে সংস্থান করা সহজ কাজ নয়; পাশাপাশি কঠিন কাজ হচ্ছে এর ব্যবস্থাপনা। আবার এ নিয়ে অন্য রকম বিবেচনা আছে। তা হচ্ছে এদের জন্য ত্রাণ কত পাওয়া যাবে, কত দিন পাওয়া যাবে? আর খাদ্য সংকটে থাকা বাংলাদেশের পক্ষে দশ লাখ লোকের বাড়তি খাদ্যের সংস্থান করা নিশ্চয়ই সাধারণ বিষয় নয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাচ্ছে। কিন্তু প্রাধানমন্ত্রীর এ আবেগ দেশের মানুষ কতটুকু ধারণ করতে পারবে তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। অভাবের মধ্যে থাকলে খাবার ভাগ করে খাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়; প্রায় অসম্ভ। যা নির্ণমোহভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মানিক বন্ধোপাধ্যয় তার পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে প্রায় ৮১ বছর আগে। অন্যের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য চিড়া নিজে এক মুট খাবার পর দুই উলঙ্গ শিশু পুত্রকে ভাগাভাগি করে খেতে দেয়ার পর দৃশ্যপট এবং কুবেরের ভাবনা গভীরভাবে প্রনিধানযোগ্য; এটিই বাস্তবতা! কুকুরের সঙ্গে মানুয়ের ভাগাভাগি করে খাবারের অনেক ছবি আছে। কিন্তু অভাবী মানুষে-মানুষে এমন দৃশ্য কি খুব বেশি দেখা যায়!
রোহিঙ্গাদের নিয়ে সবচেয়ে বড় আশংকা হচ্ছে, সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে ওঠার বিষয়টি। প্রতিশোধ নেবার কথা বলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরীর অপচেষ্টা হবেই। এ ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদী ষড়যন্ত্রও হতে পারে। মিয়ানমার থেকে যারা এসেছে তাদের মধ্যে যুবকের অনুপাত কম। কিন্তু শিশুর সংখ্যা লক্ষ্য করার মতো, প্রায় ষাট শতাংশ। আবার শিশুদের ৮৫ ভাগই রোগাক্রান্ত। আর ইউনিসেফ বলছে, মিয়ানমার থেকে আসা অন্তত ১৫শ’ শিশুকে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের বাবা-মা বা কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। এ তো কেবল এ পর্যন্ত চিহ্নিত হওয়া পরিসংখ্যান। হিসেবের বাইরে আরো অনাথ শিশু রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, পিতা-মাতা-স্বজন হারা শিশুদের সংখ্যা প্রাপ্ত হিসেবের চেয়ে অনেক বেশী; কয়েক গুণ। এই শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ছক আকতে পারে জঙ্গী গোষ্ঠী। নিউ জার্সিতে বসবাসরত আবু নাসর ফেসবুকে আমার এক পোস্টে ২২ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, “রোহিঙ্গাদের মানবিক ইস্যুটাকে রাজনীতিতে ব্যবহারে তৎপর একটা মহল। ইসলামী গজল সন্ধ্যার নামে ফান্ড রাইজিং চলছে। লন্ডনের গজল শিল্পি, অতঃপর... ।” তিনি আরো লিখেছেন, “আ'লীগের নেতারাও একসাথে; উদ্যোক্তা জামাত।”
একটু খোজ খবর নিলেই জানা সহজ, এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের মুসলিম উগ্রবাদীরা নড়েচড়ে বসেছে প্রকাশ্যে। এর বাইরে নিশ্চয়ই বিদেশে একাধিক জঙ্গীগোষ্ঠী তো অপ্রকাশ্য তৎপরতার ছক আটছে। আর কেবল বিদেশে নয়, আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও এ ধরণের কিছু হবে না- তা ভাবার কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে সাবেক এক জেনারেল দুই লাখ রোহিঙ্গাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মিয়ানমারে প্রেরনের কথা বলেছেন চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রায়। কেবল এই বলা নয়! প্রকাশ্যে বলার বাইরও নিশ্চয়ই আরো তৎপরতা আছে। সবকিছু তো আর বলেকয়ে হয় না। আবার সবকিছুই দৃশ্যমান থাকে না; ষড়যন্ত্র তো নয়ই। আশংকার বিষয় এখানেই। সম্ভবত এ শংকায়ই ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া ভারত বলছে, “রোহিঙ্গারা দেশের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক।” ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, “মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপজ্জনক এবং সম্ভাব্য হুমুকি।” ৪০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে যখন ভারতের মতো বিশাল দেশের ঘুম হারাম তখন ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে এখনো আমরা দৃশ্যত আবেগে গদগদ; আল্লাহই জানেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের কপালে কি আছে!
যে কোন বিচারেই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে জঙ্গী বানানো সহজ। যেমন সহজ হয়েছে ইরাক-সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে আইএস সৃষ্টি করা। স্বজনের নৃশংস মৃত্যু দেখার ভয়ংকর স্মৃতিতে তাড়িত মানুষদের দিয়ে যেকোন মাত্রায় ঘটনা ঘটানো অধিকতর সহজ। এদের দ্বারা মহত কাজ করানো সম্ভব; যেমন বাঙ্গালীরা করেছে ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে। সেদিন টগবগে যুবক তো বটেই, কোমল কিশোরও হয়েগেছে দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা। এর বিপরিত ধারায় মধ্যপ্রাচ্যে পরাশক্তির ষড়যন্ত্র ও বর্বতায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য স্বশস্ত্র গোষ্ঠি এবং বহু আত্মঘাতি মানব বোমা। আমাদের দেশের কি এ পর্যন্ত আত্মঘাতি মানুষের পরিচয় মেলেনি? কাজেই রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের মানবিকতার সুযোগ গ্রহণ করে বিভিন্ন শক্তি কোন ছক আটছে তা বলা কিন্তু কঠিন। মানবতার জন্য আমাদের অতি উদারতা কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে সেটিই এখন প্রধান আশংকা বিষয়।

বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭

শেখ হাসিনাকে বিশ্বের রেকর্ড সংখ্যক ৪.৩০ লাখ পিটিশন নোবেলের জন্য

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বিশ্বের প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৭ এর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেবার জন্য। অনলাইনে অনুরোধ পাঠিয়েছে। নোবেল কমিটির কাছে পাঠানো পিটিশনের এটি একটি নতুন রেকর্ড।

গেইর লন্ডস্ট্যান্ড, যিনি ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নোবেল কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন, তিনি এই ঘটনাকে ‘অভুতপূর্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন। নরওয়ে থেকে প্রকাশিত দ্য লোকাল পত্রিকায় তিনি জানিয়েছেন, নোবেল কমিটির কাছে এরকম পিটিশনের জোয়ার এসেছিল ১৯৯৪ সালে। সেসময় অবশ্য কাউকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য নয়, বরং ইয়াসির আরাফাত, শিমন পেরেজ এবং আইজ্যাক রবিনকে নোবেল দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিল প্রায় দুই লাখ মানুষ। তারা লিখিতভাবে পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু নোবেল কমিটি একবার পুরস্কার দিলে তা ফেরত নিতে বা প্রত্যাহার করতে পারে না।

এ বছর যখন শেখ হাসিনাকে নোবেল দেওয়ার জন্য নোবেল কমিটির কাছে অনলাইন পিটিশানের ধুম, তখন অং সানর সু চির নোবেল প্রত্যাহারের জন্যও প্রায় তিন লাখ মানুষ আবেদন করেছেন। নরওয়ের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন তাঁর লেখায় বলেছেন, বিশ্বে ৬৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত। এটিই বিশ্বের শান্তির জন্য বড় সমস্যা। আর এই সমস্যা সমাধানে যাঁরা নিঃস্বার্থ চিত্তে এগিয়ে এসেছেন, তারাই এবার এগিয়ে থাকবেন।

উল্লেখ, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ১৯৫৪ এবং ১৯৮১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কায় পায়। এ বছরে নোবেল পুরস্কার তাই বিশ্ব জনমতের জনপ্রিয়তম পছন্দের নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পপুলার চয়েস। অন্যদিকে, প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের পক্ষে প্রচারণা করছে। প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিন তার সর্বশেষ সংস্করণে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের উপর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে।

প্রচ্ছদের শিরোনাম হলো মেরকেলের অঙ্গীকার: জার্মানি এখনো সিরীয় শরণার্থীদের শেষ ভরসার স্থল।

শুধু মেরকেল নয়, অসলো ফোরাম, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি হ্রাস সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের জন্য সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এবং ইউরোপীয় ইউনিউয়নের ফরেন পলিসি চিফ ফেদেরিকা মোগেরিনকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার জন্য ওকালতি করছে। দ্য লোকালের সংবাদ অনুযায়ী, ওসলো ফোরামের এই মতামতের ভিত্তিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিষয়ক ইতিহাসবিদ অসল সেভিন বলেছেন, উত্তর কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনায় এখন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিশ্ব শান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবছরই নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। মাঝেমধ্যে এমন কাউকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়, যা বিশ্বকে উদ্বেলিত করে। জনগণের পছন্দের ব্যক্তিকে না বিশ্ব রাজনীতির হিসেব-নিকেশে নোবেল শান্তি পুরস্কার- ২০১৭ দেওয়া হবে, তা বোঝা যাবে আগামী ৬ অক্টোবর।

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।