রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

গ্রামের দু’পক্ষের সংঘর্ষের জেরে শিশু তামিমকে হত্যা

উল্লাপাড়ার চকপাঙ্গাসী গ্রামে খাস জমি নিয়ে চলমান গোলযোগ ও সংঘর্ষের জের ধরে শিশু তামিম হোসেন(৭) খুন হতে পারেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধীদের দাবী করছেন। কৃষক সোলেমান হোসেনের ছেলে তামিম শুক্রবার তাদের বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে উল্লাপাড়া উপজেলার নরসিংহপাড়া গ্রামে তার নানা রফিকুল ইসলাম বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। বিকেলে এই বাড়ি থেকে বের হবার পর সে নিখোঁজ হয়। পরদিন সকালে বাড়ির পশ্চিম পাশে ফসলের মাঠে একটি ক্ষেত থেকে পুলিশ তামিমের লাশ উদ্ধার করে। তামিমের গলায় কয়েকটি দাগ ছিল। পুলিশের ধারণা তামিম হোসেনকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘাতকেরা গলা টিপে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর লাশ সরিষার গাদার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে।

বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির লিটন জানান, সম্প্রতি চকপাঙ্গাসী গ্রামের জহুরুল ইসলাম ও হাসানুর রহমান হাসুর দলের মধ্যে পূর্ব গোলযোগের জের ধরে সৃষ্ট সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি খুন হন। এরা হলেন মকবুল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম। এই ঘটনায় জহুরুল ইসলামের ভাই শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে হাসানুরের দলের ৫২ জনকে আসামি করে উল্লাপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা দায়েরের পর পুলিশের ব্যাপক অভিযান শুরু করেন এবং হাসানুরের দলের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নিহত তামিমের বাবা সোলেমান কথিত জহুরুল ইসলামের খালাতো ভাই। চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির আরও জানান, গ্রামের গোলযোগের জের ধরেই শিশু তামিমকে হত্যা করা হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে এমন ধারণা পোষণের কথা জানালেন একই ইউপি সদস্য রজব আলী, আবুল কালাম আজাদ ও  বাপ্পী হোসেন।

তামিমের নানা রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন তার নাতি বাড়ির পাশে আব্দুল মান্নানের চায়ের দোকানে পিয়াজি খেতে যায়। এ সময় দুজন অপরিচিত ছেলে এসে একই সঙ্গে পিয়াজি খেয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তামিমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই ছেলে দুটি কে ছিল তা দোকানি বা স্থানীয় লোকজন কেউই বলতে পারছে না।

তামিমের বাবা সোলেমান হোসেন এখন অনেকটাই মানুসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। তিনি স্থানীয় গণ মাধ্যমকর্মীদের কাছে কথা বলতে গিয়ে প্রশ্ন রাখেন, কোন অপরাধে তার নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করা হল? তিনি তামিম হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্থির দাবি করেন। এ ব্যাপারে শনিবার রাতে উল্লাপাড়া থানায় তামিমের বাবা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সাচ্চু বিশ্বাস জানান, চকপাঙ্গাসী গ্রামের দু’পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে তামিমকে হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশ ধারণা পোষণ করছে। তবে তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত এ ব্যাপারে সঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না।

অপরদিকে রোববার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে শিশু তামিমের লাশ তার গ্রামের কবরস্থানে দাফনের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পরিবার ও গ্রামের লোকজন। এ সময় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।


সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।