সিরাজগঞ্জে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ সিন্ডিকেটের হোতাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির ব্যবস্থা গ্রহন না করায় অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন ওঠেছে। অভিভাবকরা বলছে, সিন্ডিকেটের সাথে ম্যানেজিং কমিটিও জড়িত। যে কারণে প্রায় দশদিনে পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর আলিম মাদ্রসার অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ ও চৌহালী উপজেলার দক্ষিণ জোতপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার লুৎফর রহমান শিক্ষক কতিপয় কয়েকজন অসাধু শিক্ষক নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। ইতোমধ্যে এ দুইজন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের মুলহোতা আব্দুল লতিফ ও লুৎফর রহমান যোগসাজস করে চৌহালী জোতপাড়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) নিয়োগ পরীক্ষা গোপনে শ্যামপুর মাদ্রাসায় সম্পন্ন করতে স্থানীয়দের কাছে ধরা খান। খবর পেয়ে এলাকাবাসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁর এই অবৈধ কার্যক্রমের বাঁধা দেয়। জেলায় কর্তব্যরত গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ তাঁদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এসময় ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সহকারি পরিচালক জান্নাতুন নাহার বিষয়টি বুঝতে পেরে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে চলে যান। সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবস্থার বেগতি দেখে তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে অভিভাক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সিন্ডিকেটের সদস্যরা জেলার যে কোন মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকারী মাদ্রাসা সুপারদের মোটা টাকার লোভ দেখায় এবং গোপনে সকল কিছু ম্যানেজ করে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশস্ত করেন। পরে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মুল প্রার্থী সিলেকশন এবং ডামি জোগাড় করেন। মুল প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার চুক্তি করা হয়। নিয়োগের আগেই অর্ধেক টাকা নিয়ে যে মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ হবে সেই সুপারের কাছে উৎকোচের অর্থ পর্যন্ত পৌছে দেন। এরপর গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রলোভনসহ নানা ফন্দি করে ম্যানেজ করে ফেলেন। চাকুরী হবার পর নিয়োগকৃত শিক্ষকের কাছ থেকে বাকী টাকা নিয়ে তিনজন ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এভাবে এই সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে শ্যামপুর, জগতগাতী ও রাজিবপুরসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় অন্তত ডজন খানেক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই শ্যামপুর মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাকেরা জানান, অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ দীর্ঘদিন ধরে এহেন অপকর্মের সাথে জড়িত। কিন্তু পরিচালনা কমিটি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে না। অভিভাবকগন অবিলম্বে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে শ্যামপুর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশের পর জানতে পেরেছি। এ নিয়ে কমিটির অন্যান্য সদস্যের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। অচিরেই মিটিং আহবান করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।