একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল কালজয়ী স্লোগান ‘জয় বাংলা’। সেই স্লোগান বুকে ধারণ করে বাঙালী জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে, অভ্যূদয় ঘটেছিল বাংলাদেশের। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণদের জাগাতে তাদের মধ্যে আবারও নতুন উদ্যমে সে স্লোগান ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে ‘ইয়ং বাংলা’।
সেই লক্ষ্যে তরুণদের নিয়ে শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের ডিসি হিলে সংগঠনটি আয়োজন করেছে ‘ডিভিশনাল মিট চিটাগং। ’
অনুষ্ঠানে ইয়ং বাংলার আহবায়ক ও সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন,‘তরুণ-যুব সমাজের আগামীর ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করার মন্ত্রই হচ্ছে জয় বাংলা। ’
তিনি বলেন,‘স্বাধিকার আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিল জয় বাংলা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের প্রতীক ছিল জয় বাংলা। এখনো বাংলার ১৬ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ার সেই মুলমন্ত্র জয় বাংলা। জয় বাংলার মন্ত্রকে বাস্তব রূপ দিতে হলে আমাদের দরকার ঐক্য। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে আশা আকাঙ্খার বাস্তব রূপ দিতেই আমাদের ডাক হচ্ছে জয় বাংলার ডাক। ’
নাহিম রাজ্জাক বলেন,‘দেশে আঠার থেকে ৩৫ বছরের জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি। এই চারকোটি তরুন যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করেই বাংলাদেশের যে স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ, মধ্য আয়ের বাংলাদেশ, ২০২১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে হবে। সেই স্বপ্ন যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে এ তরুন যুব সমাজের প্রতিভাকে পরিস্ফুটনে সরকারি এবং বেসরকারি যে উদ্যোগ তার সমন্বয় ঘটাতে হবে। তারই প্রতিফলন ঘটাতে ইয়াং বাংলা প্ল্যাটফর্মের সৃষ্টি। ’
জাতীয় পর্যায়ের যুব সংগঠন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন(সিআরআই), জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই), বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নেসন ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করে ইয়ং বাংলার সৃষ্টি।
প্রত্যকটি বিভাগ ও জেলাতে সাড়ে তিন’শ যুব সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে সংগঠনটির তরুনরা। সাতমাস ধরে মতবিনিময়ে তাদের যে পরামর্শ, সেই পরামর্শের প্রতিফলন ‘চিটাগং ডিভিশনাল মিট’ বলে জানান নাহিম রাজ্জাক।
তিনি বলেন,‘ভিশন ২০২১, বাংলাদেশের রূপরেখা ও ভবিষ্যত যদি পরিবর্তন করতে হয় ইয়ং বাংলা প্ল্যাটফর্ম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ’
নাহিম রাজ্জাক বলেন,‘জাতির মূল লক্ষ্য গড়ে উঠবে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। গড়ে উঠবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। সেই সোনার বাংলা গড়তে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। অনেক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তরুণদের সেই প্রতিবন্ধকতা ও সংকট মোকাবেলার সামর্থ রয়েছে। ’
তিনি বলেন,‘দলমত নির্বিশেষে সকলকে দুইটি জায়গায় ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। একটি হচ্ছে স্বাধীনতার ইতিহাস। অন্যটি হচ্ছে ভবিষ্যতের লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে সফল তরুণদের বায়োডাটা ও প্রকল্প জমা নেওয়া হয়। আগামী ৭ মার্চ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা উৎসবে ১০টি ক্যাটাগরিতে ৩০জন তরুণকে সন্মাননা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্য ও প্রযুক্তি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঁচ শতাধিক তরুণ তিন মাসের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবে।
নাহিম রাজ্জাক বলেন,‘প্রত্যকটি মন্ত্রণালয়ে তরুণদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ থাকা উচিত। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক এটা আমাদের অধিকার। তরুণদের অধিকার। ইয়ং বাংলা তরুণদের নেটওয়ার্কিং হাব হিসেবে দাঁড়াবে। যেখানে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করবো।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন,‘বর্তমানে যুব সমাজ হুমকির সম্মুখিন। বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা। এটি ভাল লক্ষণ নয়। যুব সমাজ শেষ হয়ে যাক আমরা চাই না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে’।
অনুষ্ঠানে দশম শ্রেণীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থী বলেন,‘সুবিধাবঞ্চিতদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধিতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যে সম্ভাবনা রয়েছে একজন স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে তা নেই। শুধু প্রয়োজন তাকে সুযোগ দেওয়া। প্রতিবন্ধিকতা দুর্বলতা নয়, শক্তি। ’
আরেক তরুণ বলেন,‘দেশের মোট জনশক্তির চারকোটি তরুণ। আটকোটি হাত। এ আটকোটি হাত যদি পরিশ্রম করে তাহলে বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু তা সম্ভব হবে না একমাত্র রাজনীতিবিদদের কারণে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যদি পরস্পর সহনশীল আচরণ করে তাহলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশে পরিণত হবে।’
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি তুলে ধরেন নটরডেম কলেজ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠান শেষে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।