বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের
বিরুদ্ধে দাঁড়ানোয় সিরাজগঞ্জের সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি
তার দল আওয়ামী লীগের নেতাদের।
তারা বলেন, সোমবার খুন হওয়া সাইফুল সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াত জোটের
কর্মীদের নাশকতার মামলায় আদালতে সাক্ষ্য যেমন দিয়েছিলেন, তেমনি যৌথ অভিযানে
তথ্য দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সংগঠন গোছাতেও ভূমিকা রাখছিলেন।
তবে
আওয়ামী লীগ নেতাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা
দাবি করেছেন, সাইফুল হত্যাকাণ্ডে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের কোনো
সম্পৃক্ততা নেই।
সিরাজগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া
সম্পাদক সাইফুলকে (৪২) সোমবার বিকালে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাতিয়ানতলা
বাজারে কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই বাজারের কাছেই বাঐতারা গ্রামে তার
বাড়ি।
মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়ির সামনে সাইফুলের প্রথম জানাজা হয়। পরে
লাশ নেয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে। সেখানে ফুলেল শ্রদ্ধা
জানানোর পর লাশ নিয়ে শহরে মৌন মিছিল হয়। বিকালে শহরের মালসাপাড়া কবরস্থানে
দ্বিতীয় জানাজার পর তাকে দাফন করা হয়।
সদর
থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সাইফুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত
সন্দেহে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের
গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।
এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী জবান আলীর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা সাইফুলকে হত্যা করে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বলে জানান ওসি।
“হত্যার
আগে কিলাররা ছাতিয়ানতলী বাজারে মিটিং করে। এরপর লোক মারফত তাকে বাড়ি থেকে
ডেকে আনা হয়। মোটর সাইকেল নিয়ে বাজারেও গেলেও কাউকে না পেয়ে ফিরে আসার পথে
বাশের ব্রিজের কাছে তাকে আটকে হত্যা করা হয়,” বলেন তিনি।
বিরোধী
জোটের হরতাল-অবরোধের সময় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় ও সিরাজগঞ্জ-মুলিবাড়ি
আঞ্চলিক সড়কের বাঐতারা এলাকায় গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা
ধারাবাহিকভাবে ঘটে আসছিল।
সদর উপজেলার সয়দাবাদ এলাকার যুবলীগকর্মী
হামিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই সব ঘটনায় দায়ের করা
মামলায় সাইফুল সাক্ষ্য দেন। এই কারণে বিরোধী জোটের ক্যাডাররা তার ওপর
ক্ষিপ্ত ছিল।”
২৬ ডিসেম্বর সয়দাবাদ ইউনিয়নে যৌথবাহিনী অভিযানে ২৩ জনকে আটক করা হয় এবং
জবান আলীসহ মোহনপুর গ্রামের বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি
চালানো হয়।
“এই কারণে জবান বাহিনীর সদস্যরা সাইফুলের ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে,” বলেন পূর্ব মোহনপুর গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী সেলিম আহম্মেদ।
জেলা
যুবলীগের সভাপতি মঈন উদ্দিন খান চিনু বলেন, “সয়দাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের
সংগঠনকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে
পরিকল্পিতভাবে সাইফুলকে হত্যা করা হয়েছে।”
“একাত্তর সালের কায়দায়
জামায়াত-বিএনপিকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যায় মেতে উঠেছে,” বলেন
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম হোসেন আলী হাসান।
দশম সংসদ
নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য
হাবিবে মিল্লাত মুন্না নিহত সাইফুলকে দক্ষ সংগঠন উল্লেখ করে বলেন, “যেখানেই
আওয়ামী লীগের দক্ষ সংগঠক গড়ে উঠছে। বেছে বেছে তাদেরই হত্যা করছে
বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা।”
আওয়ামী লীগ নেতাদের এই অভিযোগের বিষয়ে
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শাহিনুর আলম বলেন,
“সাইফুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
একই কথা বলেন জেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর বাচ্চুও।
দুই
সন্তানের জনক সাইফুলের একমাত্র মেয়ে সোমবার প্রকাশিত প্রাথমিক সমাপনীর
ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার এই ভাল ফলাফলেও ছায়া ফেলেছে বাবার মৃত্যু।
প্রায় নির্বাক শিশুটি এখন মা-ভাইয়ের সঙ্গে বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি
জানিয়েছে।