মঙ্গলবার
প্রথম প্রহরে কামারখন্দে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে নিহত এই দুজন ডাকাত বলে পুলিশ দাবি
করলেও তাদের স্বজনরা বলছেন, তারা নসিমন চালাতেন।
নিহতরা
হলেন-কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের বানিয়াগাতি দক্ষিণপাড়ার আহের আলীর ছেলে
মুনসুর আলী (৩২) এবং বানিয়াগাতি উত্তরপাড়ার সুজাব আলীর ছেলে আল মামুন (২৯)।
বানিয়াগাতির
যে স্থানটিতে মুনসুর ও মামুন নিহত হন, বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের সময় সেখানে
মহাসড়কে প্রায়ই রাতের বেলায় যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতির ঘটনা ঘটত বলে
স্থানীয়রা জানিয়েছে।
বিরোধী
দলের পঞ্চম দফা অবরোধের মধ্যে এই ঘটনা ঘটল। এরপর থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় র্যাব,
পুলিশ ও বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের মহাসড়কে টহল ও
গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু
সেতু পশ্চিমপাড় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, রাত দেড়টার
দিকে বানিয়াগাতি এলাকায় ৮/১০ জনের একটি ডাকাত দল মহাসড়কে যানবাহন আটকে ডাকাতির
চেষ্টা করে। তখন পুলিশ গিয়ে ডাকাতদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
এতে কেউ
মারা গেছে কি না, রাতে তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ভোরে ঘটনাস্থলের অদূরে মামুনের
লাশ পাওয়া যায়। তার শরীরের অর্ধেক অংশ যানবাহনের চাকায় পিষ্ট ছিল।
সকাল
১১টার দিকে মুনসুরের লাশ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা করে পুলিশ। পিঠ ও পায়ে
গুলিবিদ্ধ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ভদ্রঘাট
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হরতাল-অবরোধের
সময় প্রায়ই রাতের বেলায় মহাসড়কের বানিয়াগাতি এলাকার এ স্থানটিতে যানবাহন ভাংচুর,
অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে
থাকে।
মুনসুর
ও মামুন ওইসব ডাকাতির ঘটনায় জড়িত বলে দাবি
করেন পুলিশ কর্মকর্তা হালিম।
মুনসুরের
মা হাসনা বেগম এবং মামুনের মা নূরজাহান বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,তাদের
ছেলেরা ডাকাতিতে কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলে জড়িত ছিলেন না, দুজনেই নসিমন চালাতেন।
মুনসুরের মা হাসনা বেগম (বায়ে) এবং মামুনের মা নূরজাহান বেগমের আহাজারি।
হাসনা
বলেন, রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হন মুনসুর। পিঠ ও পায়ে বিদ্ধ গুলি নিয়েই বাড়িতে
আসেন তিনি।
“যানবাহনের কোনো ব্যবস্থা না
থাকায় চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নিতে পারিনি। এর মধ্যে ভোরে সে মারা যায়।”
“আমরা ছেলে ডাকাত না। সে নসিমন চালায়,” বলেন হাসনা। মুনসুরের একটি মেয়ে
রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামুনের
মা নূরজাহান বলেন, সারারাত তার ছেলে বাড়িতে ফেরেনি। তবে রাত ১০টার দিকে বাড়ির পাশের
মহাসড়কে গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। ভোরে মহাসড়কের ওপর ছেলের লাশ পড়ে ছিল, যার অর্ধেক
ছিল থেতলানো।
“আমার ছেলে কোনো দল করে না,
ডাকাতও নয়। সে নসিমন চালাত,” বলেন
নূরজাহানও।