সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭

এতিমের টাকা মেরে খেয়ে এখন নির্বাচন করতে চায়

শ্যামল সরকার ও বারেক কায়সারঃ
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী  *নির্বাচন নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে  *মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনের খসড়া অনুমোদন।

যারা এতিমের টাকা মেরে খায় তারা আবার নির্বাচন করতে চায়। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি মহল আগামী নির্বাচন যাতে হতে না পারে সেজন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ নির্বাচন না হলে ওই মহলটি বেশ সুবিধা পায়। একারণে তিনি সকলকে চোখ-কান খোলা রেখে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য প্রসঙ্গক্রমে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করে মাঠে মোতায়েন সম্পর্কে বিএনপির দাবি উল্লেখ করে বলেন, এর যৌক্তিকতা নেই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালে সার্বিক কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকে। নির্বাচন কমিশন বিবেচনা করবে কী করা হবে আর কী করা হবে না। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত রোডম্যাপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সকলকে কথা বলতে নিষেধ করেন।    

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে না হয় এজন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা হচ্ছে। সবাইকে ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে চোখ-কান খোলা রেখে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিভাবে নির্বাচন হবে ওই কথা সংবিধানেই বলা হয়েছে। এনিয়ে কথা বলার দরকার নেই। কিছু মানুষ আছে নির্বাচন চায় না। নির্বাচন না হলে অনির্বাচিতরা ক্ষমতায় বসবে। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক।               সব দল নির্বাচনে এলে ভালো হয়। কিন্তু  কোনো দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তো কিছু করার নেই।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোডম্যাপ ইসির বিষয়। এই রোডম্যাপ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আপনারা কোন মন্তব্য করবেন না। এ বিষয়টি আপনাদের মনে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে হবে। এ জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। কাজেই আগে থেকে এ বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্য নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে কথা বলেন। তারা বলেন, নির্বাচনের সময় পুলিশ ও র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিবেশ বজায় রাখতে পারবেন। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করতে পারে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে কোন কোন মন্ত্রী বলেন, সাজার ভয়ে কি খালেদা জিয়া দেশ ছেড়েছেন? এমন প্রশ্ন এখন দেশের অনেক মানুষই করছে।

মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনের খসড়া অনুমোদন

মানব দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ প্রতিস্থাপন সংশোধন আইন ২০১৭-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সরকার চিকিত্সা বিজ্ঞানের উত্কর্ষের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চিকিত্সা সেবার উন্নয়ন এবং মানব অঙ্গ পাচার বন্ধ ও এর অবৈধ ব্যবসা রোধে আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে কোন ব্যক্তি অঙ্গদাতা ও গ্রহিতা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে বা এতে কাউকে উত্সাহিত বা প্ররোচিত বা ভীতি প্রদর্শন করলে তার সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বাধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে। এছাড়া আইনের অন্যান্য ধারা অমান্যে বা এ ব্যাপারে কাউকে সহায়তার অপরাধে সর্বোচ্চ ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও সর্বাধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। কোন চিকিত্সক এই আইনে অপরাধী সাব্যস্ত হলে তার বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে প্রণীত মূল আইনটিতে সাজার পরিমাণ বেশি থাকলেও সংশোধিত আইনে সেটা কমানো হয়েছে। এছাড়া আইনটি প্রণীত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি এই আইনের কোন প্রয়োগ হয়েছে বলে জানা যায় না।

আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সেই কমিটি সংশোধনীর জন্য খসড়া আইন তৈরিতে কাজ করে।

কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকের মালিক, পরিচালক ও ম্যানেজার বা অন্য কোন পদবিধারী যদি প্রমাণ করতে না পারেন যে তাদের জ্ঞাতসারে কোন অপরাধ হয়নি এবং তারা এটা রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, তবে তারাও প্রস্তাবিত আইনে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।

এ সম্পর্কিত ১৯৯৯ সালের আইনে এর কোন ধারা লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা সর্বাধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

আইনের সংশোধনীতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন বলতে বাবা-মা, সন্তান, ভাই, বোন, নাতি নাতনি, স্বামী-স্ত্রী এবং রক্তের সম্পর্কীয় দাদা, নানা, মামা, চাচা, খালু, ফুফা, মামি, চাচি ও ফুপুর মতো আত্মীয়-স্বজনদেরকে সঙ্গায়িত করা হয়েছে।

খসড়া আইন অনুযায়ী লাইফ সাপোর্টে থাকা মানুষের দেহ থেকে সংগৃহীত কিডনি, লিভার, হাড়, চক্ষু, হার্ট, লাং এবং টিস্যুসহ মানব দেহের যে কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানব দেহে প্রতিস্থাপন করা যাবে। কোন হাসপাতাল সরকারের অনুমোদন ব্যাতীত মানব দেহের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। তবে সরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের অনুমোদন ছাড়াই মানব দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব বলেন, একজন নিউরোলজিস্ট, এনেস্থেসিয়োলজিস্ট এবং একজন মেডিসিন অথবা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে প্রতিটি হাসপাতালে তিন সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে এবং তারা অধ্যাপক অথবা কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপক হবেন।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘোষণাদানকারী কোন ব্যক্তির কোন আত্মীয়-স্বজনের এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি কার্ডিয়াক কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপনের গোটা বিষয়টি দেখভাল করবেন এবং পরামর্শ দেবেন।

প্রতিটি হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হবে। বোর্ডে সদস্য হিসেবে এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে কো-অপট করা যাবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আইনটি কার্যকরের ৬০ দিনের মধ্যে বোর্ডের সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে।

সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভায় মন্ত্রীবর্গ ও প্রতিমন্ত্রীগণ ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রঃইত্তেফাক

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।