শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭

সিরাজগঞ্জে জন্মহার বাড়ছে অটিজম শিশুর

সিরাজগঞ্জে জন্মহার বাড়ছে অটিজম শিশুর


তাঁত শিল্পের পরিত্যক্ত রং ও রাসায়নিক যুক্ত পানির ব্যবহারে মায়েদের ক্রমশ অটিজম শিশু জন্মের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাঁত রঙের ব্যবহৃত বিষাক্ত বর্জ্য আর পানি এ এলাকার ভূগর্ভের পানির স্তরের সঙ্গে মিশে থাকা খাবার পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে যা নলকূপের মাধ্যমে উঠে আসে। এ মারাত্মক দূষিত পানি পান করার কারণে মাতৃগর্ভ থেকেই অটিজম শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

বিশ্ব অটিজম দিবসে নানা দিক নিয়ে আলোচনা হলেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ ইস্যুটি সবার অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত রং ও রাসায়নিক বর্জ্য ফেলার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও তাঁত সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের চারটি উপজেলায় তার প্রযোগ নেই। ফলে এ অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। ক্রমশ জন্মহার বাড়ছে অটিজম শিশুর।

তাঁত ও বস্ত্রশিল্পের জন্য দেশের অন্যতম একটি জনপদের নাম সিরাজগঞ্জ জেলা। তাঁত শিল্পের জন্য ব্যবহৃত সুতার রঙের বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি প্রতিনিয়ত ফেলা হয় এলাকার জলশায়গুলোতে। দীর্ঘদিন ধরে এই বর্জ্য ফেলার কারণে জলাশয় ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কারখানার মালিকেরা পাইপ দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভুগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। এসব এলাকার নলকূপ চাপলেই এখন দূষিত পানি উঠে আসছে। আর এরকম ভয়ানক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত পানি প্রতিনিয়ত পান করছে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। এতে গর্ভবতী মায়েরা অটিস্টিক আর প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম দিচ্ছেন।

এ অঞ্চলের বেশ কিছু নলকূপের পানির নমুনা সংগ্রহ করে সিরাজগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরও রাজশাহী জোনাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় পানিতে মারাত্মক ডিজেল, অক্সিজেন, মেগানিস, ফসফেট, সিসা, মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে, যা মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

জেলার বেলকুচি উপজেলার গাড়ামাসি গ্রামের শহিদুল্লাহ খান ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তাদের বাড়ির চার পাশে সুতার রঙের ডাইং ও প্রসেস মিল রয়েছে। এসব মিলের বর্জ্যযুক্ত রঙিন পানি তাদের বাড়ির চাপকলে উঠে আসে। এসব পানিতে দুর্গন্ধ থাকলেও বাধ্য হয়েই তা পান করতে হয়। এ কারণে  তাদের ছয় বছরের শিশুকন্যা এশা মনি অটিজমের শিকার হয়েছে বলে ধারণা  করছেন এশা মনির চিকিৎসক। শহিদুল্লাহ খান ও নাজমা বেগম এখন ভয় পাচ্ছেন পরবর্তী সন্তান নিতেও।

শাহজাদপুরের শেখ খালীদ সাইফুল ও তার স্ত্রী নাজরিন বেগম জানান, তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয় অটিজমের শিকার হয়ে। দেশের নামি দামি হাসপাতালের বড় বড় চিকিৎসক দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাদের বাড়ির নলকূপের পানি আর পান করা যাবে না। বিষয়টি জানতে পেরে এ বাড়ির পানি নিয়ে পরীক্ষা করলে পাওয়া যায় মারাত্মক ফসফেট, সিসা ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিক।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমান জানান, এসব তাঁত শিল্প এলাকার সুতা রং করার প্রসেস ও ডাইং মিলের বিষাক্ত বর্জ্যমিশ্রিত পানি সরাসরি নলকূপের পাইপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশিয়ে দিচ্ছে অসাধু মিল মালিকরা। এ কারণে এ অঞ্চলের নলকূপগুলোর পানিতে মারাত্মক ডিজল অক্সিজেন, মেগানিস, ফসফেট, সিসা, মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জ সরকারি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও  শিশু রোগ বিষেশজ্ঞ  অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল ইসলাম জানান, যদি কোনও গর্ভবতী মা কিংবা শিশু ডিজেল অক্সিজেন, মেগানিস, ফসফেট, শিশা, মাত্রা অতিরিক্ত আয়রন ও আরসেনিকযুক্ত পানি পান করে তাহলে ওই গর্ভবতী মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় সন্তান অটিজমের শিকার হতে পারে, আবার ছোট শিশুরাও যদি এ পানি পান করে তাহলে তাদেরও সম্ভাবনা থাকে।

সিরাজগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. হাবিবে মিল্লাত মুন্না জানান, ভূগর্ভস্থ পানি যথাযথ পরীক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ মহলকে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জেলার সদর হাসপাতালে অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বিভাগ খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।