পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও এখনও গেজেট প্রকাশ হয়নি।
স্বাধীনতার পর সিরাজগঞ্জের তিন মুক্তিযোদ্ধা সকিনা হোসেন, সাফিনা লোহানী ও আমিনা বেগম মিনা প্রতিশ্ঠা করেন ‘বীরাঙ্গনা পুনর্বাসন কেন্দ্র’। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়, যা আজও চালু হয়নি। এরপর ওই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বীরাঙ্গনারা নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান।
মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতা নারীদের এতদিন বীরাঙ্গনা বলা হলেও বর্তমান সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এখনও গেজেট প্রকাশ হয়নি।
সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থার পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৩৫ জন বীরাঙ্গনা সিরাজগঞ্জ শহরের ‘নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ আশ্রয় গ্রহণ করেন। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেন, যা আজও চালু হয়নি।
সিরাজগঞ্জের ৩৫ বীরাঙ্গনার মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে থাকা ১৮ জনের মধ্যে অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ, যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটিও নেই।
কয়েকজন বীরাঙ্গনা সরকারি ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির ইউসূফ বাচ্চু একুশে পদকের ১ লাখ টাকা এই বীরাঙ্গনাদের দান করেছেন।
এছাড়া স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব হারানো এই নারীদের কোনো প্রাপ্তি নেই বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী।
সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোল এলাকার বীরাঙ্গনা রাহিলা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র ৬ মাস আগে তার বিয়ে হয়। যুদ্ধ শুরু হলে পাকসেনা ও রাজাকাররা তার গ্রামে হানা দেয়। এসময় তাকে সেনাক্যাম্পে ধরে নিয়ে টানা ১৭ দিন আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সেখান থেকে ফিরে আসার পর স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেনি।
বর্তমানে তিনি শহরের এম এ মতিন বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন।
নতুন ভাঙ্গাবাড়ি এলাকার বীরাঙ্গনা সূর্য বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার এক ফুফাতো ভাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। পার্শ্ববর্তী ফকিরতলায় মুক্তিযোদ্ধারা এক স্থানীয় রাজাকারকে মেরে ফেলে।
এ কারণে রাজাকাররা সূর্য বেগমের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং টানা ২০ দিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। বতর্মানে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ও অসুস্থ সূর্য্য বেগম মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। এছাড়াও শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার মাহেলা বেগম, তেলকুপির কহিনুর বেগম, যমুনা নদীর ক্লোজার সংলগ্ন এলাকার সামিনা বেগম, মতিন সাহেবের ঘাট এলাকার আয়মনা বেগম, সদরের কান্দাপাড়ার হামিদা বেগমরা বসবাস করছেন নদীর তীরে, রাস্তার পাশে কিংম্বা রেল স্টেশনে।
এসব বীরাঙ্গনা জানান, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে সনদ পেয়েছেন, কিন্তু , ৪৩ বছরেও তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। বর্তমান সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিলেও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় তারা সনদ বা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।তারা দ্রুত গেজেট প্রকাশের দাবি জানান।