বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

আজ ৫ই মে ২০১৩ সালের এই দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলা

আজ শুক্রবার, ৫ মে, ২০১৩ সালের এই দিনে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীর মতিঝিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলা চালানো হয়। 
 ১৩ দফা দাবি আদায়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হঠাৎ সমাবেশের ডাক দেয়। এই সমাবেশ কেন্দ্র করে ওইদিন দিনভর রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও বাগেরহাটে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয় রাজধানীতে। মতিঝিল শাপলা চত্বরের সমাবেশ কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশ এলাকায় ব্যাপক তা-বলীলা চালানো হয়। পরে মধ্যরাতে চালানো যৌথ অভিযানে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতকর্মীদের হটিয়ে দেয় র‌্যাব, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হেফাজত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট এবং রাজধানীতে ৫৩টি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও রমনা থানাসহ বিভিন্ন থানায় ৪২টি মামলা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা হয় ৫৩টি মামলা। এর মধ্যে এখনো ৫০টিই তদন্তাধীন রয়ে গেছে। ৩টি মামলার চার্জশিট হয় ২ বছর আগে। কিন্তু তার বিচারই শুরু হয়নি। ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়ান হেফাজতের নেতাকর্মীরা। কিন্তু বর্তমানে তারা প্রকাশ্যে ঘুরছেন। এমনকি তাদের নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বৈঠক পর্যন্ত করছেন। জানা গেছে, হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করতে কোনো চাপও নেই। বর্তমানে প্রতিটি মামলার তদন্ত একরকম ‘হিমঘরে’ বন্দি হয়ে পড়েছে। কবে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হবে তা বলতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা। 
 
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়। কিছু মামলার বাদী পুলিশ। সেদিন অনেক ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনার পৃথক মামলা করা হয়। কিছু মামলার তদন্ত ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারীসহ সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করেছি। এখন ‘ফুট সোলজার’দের খোঁজা হচ্ছে। এ কারণে মামলার তদন্ত বিলম্বিত হচ্ছে।
এসব মামলায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবু, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফরিদ উল্লাহ, মুফতি ফয়জুল্লাহ, তাজুল ইসলাম, আবুল মালেক হালিম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ফজলুল হক জিহাদী, মুফতি হারুন ইজাহার, মাওলানা ইলিয়াছ ওসমানী, নূর হোসেন কাসেমী, মাওলানা মাহফুজুল হক, আবদুল কুদ্দুস, নুরুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আমিনী, মুফতি নুরুল আমিন, শাখাওয়াত হোসেন, আতাউল্লাহ আমিন, রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ হেফাজতে ইসলামের অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করা হয়। ঢাকার সব মামলাতেই হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী প্রধান আসামি। তবে মামলার আসামি করা হয়নি সংগঠনটির আমির আহমদ শাহ শফীকে। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী এবং যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদেরও মামলায় আসামি করা হয়।
 
রাজধানীতে করা ৪২ মামলার বেশিরভাগই রুজু করা হয় মতিঝিল, রমনা ও পল্টন থানায়। পরে এসব মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে হেফাজতে ইসলামের বেশিরভাগ নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন করেন। তাদের মধ্যে মুফতি ফয়জুল্লাহসহ যেসব হেফাজত নেতা বিএনপি, জামায়াত কিংবা সরকারবিরোধী অন্যসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল তাদের ধরতে দফায় দফায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তাদের আর শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। মুফতি ফয়জুল্লাহ দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর এখন প্রকাশ্যে চলাফেরা করেন।
 

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।