শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

“সাংবাদিক শিমুলের বাড়ীতে এখন শোকের মাতন “নাতির মৃত্যু সংবাদ শোনার পর নানীর মৃত্যু।”

“সাংবাদিক শিমুলের বাড়ীতে এখন শোকের মাতন “নাতির মৃত্যু সংবাদ শোনার পর নানীর মৃত্যু।” একই বাড়ীতে দুটো লাশ যেন পুরো এলাকাই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহজাদপুর পৌর এলাকার মাতনা গ্রামে নিজ বাড়িতে রোকেয়া বেগমের (৯০) মৃত্যু হয়। রোকেয়া ওই গ্রামের মৃত গোলাম হোসেনের স্ত্রী। শিমুলের খালাত ভাই হারুন অর রশীদ জানান, শিমুল ছোটবেলা থেকেই নানির কাছে থাকতেন। লেখাপড়াও নানির কাছে থেকে করেছেন। “নাতির মৃত্যু সংবাদ শোনার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।” শনিবার সকালে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সামনে নানি ও নাতির জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের পাশাপাশি দাফন করা হবে বলে জানান হারুন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বৃহস্পতিবার পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিম ও ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদ এবং মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুর পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন। ওই সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃত‌্যু হয়। শুক্রবার বিকালে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের তিন চিকিৎসক শিমুলের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আকরামুজ্জামান জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। চিকিৎসকদের তিন সদস্যের একটি টিম ময়নাতদন্ত করেন। “নিহত সাংবাদিকের চোখ দিয়ে একটি গুলি ঢুকে মাথার মগজে প্রবেশ করেছিল। ঘণ্টাব্যাপী ময়নাতদন্তের সময় মাথার ভিতর গুলিটি পাওয়া যায়।” ময়নাতদন্তের সময় মর্গে তাদের সঙ্গে সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ মঞ্জুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বলে জানান আকরামুজ্জামান। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক জেলা প্রাশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, পুলিশকে ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিমুলের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকেশিমুলের মৃত্যুতে শোকে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাব তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রেসক্লাবে তিনদিন কালো পতাকা উত্তোলন এবং তিনদিন জেলার সাংবাদিকদের কালো ব্যাজধারণ। শুক্রবার রাতে প্রেসক্লাবের সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য এদিকে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের পক্ষ থেকে পৌর মেয়র ও তার ২ ভাইসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পুলিশ মেয়রের দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, শাহজাদপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনায় তার চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় শাহজাদপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরু, তার ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুসহ ১১জনের নাম উল্লেখ্য ও ৫/৭জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী মেয়রের ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মেয়রের ব্যবহৃত শর্টগানটি জব্দ করা হয়েছে। মারপিটের কারনে বিজয়ের ২ পা ও ডান হাত ভেঙ্গে গেছে। তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

ঘটনার জেরে শাহজাদপুর উপজেলায় শনিবার সকাল থেকে অর্ধবেলা হরতাল আহ্বান করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করার পর ছাত্রলীগ এই হরতালের ঘোষণা দেয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ কাজল বলেন, বিজয়কে মারধর ও মেয়রের শর্টগানের গুলির প্রতিবাদে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শনিবার উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।