ট্রেন টিকিটে যুক্ত
হবে যাত্রীর নাম, সঙ্গে রাখতে হবে পরিচয়পত্র। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি
ঠেকাতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে শিগগিরই এ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছে
রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।সোমবার (৯ জানুয়ারি) রেলভবনে
দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রেলপথমন্ত্রী বিষয়টি জানান। আলাপচারিতায় উঠে আসে
বাংলাদেশের রেলপথ নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ
রেলওয়ে একদিন হবে বিশ্বনন্দিত।মন্ত্রী বলেন, ভারতে টিকিটে যাত্রীর নাম ব্যবহার করা হয়। আমরাও এ পদ্ধতি
ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
অল্পদিনের মধ্যেই এর কার্যক্রম দেখতে পাবেন।
মন্ত্রী বলেন, যেখানেই কালোবাজারি সেখানেই প্রতিহত করা হবে। কোনো ছাড় নেই।
কাউকে পাওয়া গেলে সরাসরি হাজতে পাঠানো হবে। এ জন্য জিআরপি পুলিশসহ দু’টি
সংস্থা কাজ করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে টিকিটে নাম লেখা পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেখানে যিনি
ভ্রমণ করবেন তার নামেই টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। অন্যজনের টিকিট দিয়ে ভ্রমণ
করার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য ট্রেনে আলাদা চেকিং রয়েছে। তারা ট্রেনে উঠে
যাত্রীদের পরিচয়পত্র কম্পিউটার সিটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। নাম না মিললেই
আর রক্ষে নেই।অন্যদিকে বাংলাদেশে টিকিটে নামের কোনো বালাই নেই। কে টিকিট কাটছেন আর কে ভ্রমণ করছেন তার কোনো ঠিক নেই। এই সুযোগে কালোবাজারিরা এক শ্রেণীর অসাধু রেলকর্মীর সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট কালোবাজারি করে আসছেন। একসঙ্গে অনেকগুলো টিকিট কিনে চড়া দামে বিক্রি করছেন কালোবাজারে। অনেক সময় কাউন্টারে টিকিট না মিললেও কালাবাজারিদের কাছে ঠিকই পাওয়া যায়। এ জন্য টিকিট কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে। ক্ষেত্র বিশেষে রেলওয়ের কিছুই করার থাকে না। নাম প্রথা চালু হলে একদিনেই টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন রেলওয়ের লোকজন।
আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত অনেকটাই অবহেলিত ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তখন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিভাগ ছিল রেলপথ। আওয়ামী লীগ ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি রেলপথ বিভাগকে আলাদা মন্ত্রণালয় হিসেবে গঠন করে। তার পৌনে দুই বছরের মাথায় কুর্মিল্লার বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের।
লোকসান দিতে দিতে ছন্দ হারিয়ে ফেলা রেলওয়েকে ছন্দে ফেরানো মন্ত্রী হিসেবে ছিল তার প্রধান চ্যালেঞ্জ। এক সময় ট্রেনের সময়সূচির কথা উঠলেই প্রথমে আসত, ‘কয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে’। কিন্তু সেই দিন এখন সুদূর অতীত। এখন বেশিরভাগ ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। পৌঁছেও দিচ্ছে যথা সময়ে।
ট্রেনের যেমন আধুনিকায়ন হয়েছে, তেমনি ছন্দময় ট্রেন পেয়েছে গতি। আগের চেয়ে অনেক কম সময়ে গন্তব্য পৌঁছে দিচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় লাগছে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টা। আরও কম সময়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন শুধু অবশিষ্ট রয়েছে লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত। এই লাইনটুকুর কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। যে কেউ ঢাকা থেকে সকালে রওয়ানা দিয়ে বন্দরনগরীতে গিয়ে অফিস করে সন্ধ্যায় ফিরতে পারবেন। একইভাবে বন্দরনগরীর কেউ রাজধানীতে এসে অফিসিয়াল কাজ সেরে দিনে দিনে ফেরত যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০০৯ সালে দৈনিক যাত্রী বহন ক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ সোয়া লাখ। নতুন ট্রেন, নতুন বগি ও নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করার ফলে এখন দৈনিক আড়াই লাখ যাত্রী বহন করছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পাঁচলাখ যাত্রী বহনে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ স্বপ্নচারী মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, এখন আর রেলপথ রুগ্ন নয়। এখন সুস্থ সবল ও আরামদায়ক ভ্রমণের নাম। পুরাতন কোচ পরিবর্তন করে নতুন কোচ যেমন যুক্ত করা হচ্ছে, তেমনি বেশকিছু রুটে নতুন লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। আগে কক্সবাজার জেলায় কোনো রেলপথ ছিল না। আখেরী স্টেশন ছিল চট্টগ্রামের দোহাজারি। এখন দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে ট্রেনে চড়েই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যাওয়া যাবে।