মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আবারও মাইশার মায়ের কান্না

মেয়ে আর স্বামীকে হারানো মাইশার মায়ের কান্না এবার আর একা কাঁদলেন না, তার কান্না কাঁদালো সবাইকে। সব হারানো বেদনা জানা যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ‍চোখ জলে ভরে ছিলো আগে থেকেই। মাইশার মায়ের কান্নায় তাকে চোখ মুছতে হয়েছে বার বার। আর জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে কয়েক শ’ মানুষের প্রত্যেককেই কাঁদিয়েছে সে কান্না।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় জাদুঘরে চলমান হরতাল-অবরোধে বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও সহিংসতা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভায় এই পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-বিভাগ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা, সংসদ সদস্যরা, বিদেশি কূটনীতিক, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক আর রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। তাদের মাঝেই কথা বলছিলেন মাইশার মা মাফরুহা বেগম।
মাইশা এক কিশোরী। বাবা মায়ের সঙ্গে কক্সবাজারে আনন্দভ্রমণ শেষে ঢাকা ফেরার পথে এই পরিবারটি গভীর রাতে আক্রান্ত হয় আরও কিছু মানুষের সঙ্গে। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে সে ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন, আহত হন ৩০ জন। মাইশা ও তার বাবা নুরুজ্জামান প্রাণ হারান, কিন্তু শরীরে বিভিন্ন স্থানে দগ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যান মাফরুহা বেগম। তিনি বলেন, আমার কোলে একটু আগেও ঘুমিয়ে ছিলো মেয়েটি। ঘুমন্ত অবস্থায়ই দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারাতে হলো আমার ফুলের মতো মেয়েটিকে। প্রিয়তম স্বামী নূরুজ্জামানের কথা বলতে গিয়ে মাফরুহ‍া বেগম, আরেক দফা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার মৃত্যুতে বৃদ্ধ বাবা-মাসহ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। জানান, ধর্মপ্রাণ স্বামী তার পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন, কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তার বুক পকেটের তসবিহটি অক্ষত থেকেছে। ষোল কোটি মানুষের প্রতিনিধি হয়ে মাফরুহা বেগম বলেন, যারা পেট্রোল বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে মানুষ পুড়ে মারছেন তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি, আর অনুরোধ করছি আপনারা এই অপরাজনীতি বন্ধ করুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যারা আমার ফুলের মতো মেয়েটিকে পুড়িয়ে মারলো তাদের আপনি ধরুন, শাস্তি দিন। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতি মাফরুহা বেগমের আহ্বান, আসুন আমরা দেশটাকে ভালোবাসি, দেশের জনগণকে ভালোবাসি। 

হাজির হয়েছিলো সুমন নামের ছোট্ট ছেলেটিও। জানালো পেট্রোল বোমার আগুন তারা মা ও ছোট বোনকে পুড়ে মেরেছে। তার বাবার দু হাত পুড়ে ছাই করেছে। সুমন জানিয়েছে সে অসহায়। কিভাবে বাঁচবে জানে না। কথা বলছিলেন যাত্রাবাড়িতে আগুনে পুড়ে মৃত নূর আলমের স্ত্রী চম্পা। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন। চম্পা বলেন, এই আগুনে যারা পুড়ছে তাদের কষ্ট আমি বুঝি। আমি আমার স্বামীর চিৎকার দেখেছি। আমার স্বামীই সে কথা বলেছে। নিজের কষ্ট সহ্য করেছে আর বলেছে, এই আগুনে যেনো আর কেউ না পোড়ে। 

সে কথাই বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষকে ধোকা দিতে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা এভাবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েই হামলা চালাতো। তিনি বলেন, এই অপশক্তির হাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের অমর্যাদা হতে দেওয়া যায় না। আর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আসাদুজ্জামান নূরের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, রাজনীতির নামে মানুষ হত্যা আর সহ্য করা হবে না। অস্রু আজ ক্রোধে পরিণত হয়েছে। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতেই হবে। তিনি বলেন, এরা সন্ত্রাসী, এরা হত্যাকারী এরা জঙ্গি, এরা অগ্নিসংযোগকারী। এদের প্রতিহত করবোই।
 

সিরাজগঞ্জের সর্বশেষ সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।