রূপার লাশ আসবে। শেষ বারের মতো এক নজর দেখার জন্য সবার মন ছটফট করছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে টাঙ্গাইলের মধুপুর কবরস্থান থেকে রূপার লাশ উত্তোলনের পর অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে পৌছার পর আদরের মেয়েকে দেখার জন্য ছুটে আসেন জন্মদাতা মা ও ভাই-বোন স্বজনরা। কিন্তু সাতদিন আগে মারা যাওয়ায় রূপার শরীরে পচন ধরায় কফিন খোলা সম্ভব হয় না। তাই সকলের আদরের মেয়েটির কফিন জড়িয়ে ধরে চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না মা-বোন ও স্বজনদের। আদরের মেয়ে হারা মা ও বড় বোন হারা ছোটবোনদের বুকফাটা আহাজারি দেখে এলাকাবাসীর চোখেও ঝরতে শুরু করে অশ্রু। তারপরেও কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে সবার একটাই দাবী উচ্চারিত হয় রূপার হত্যাকারীরা যেন আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বেরিয়ে না যায় এবং খুনীদের যেন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয়।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার রাতে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাবার পথে চলন্তবাসে ৫জন মিলে ধর্ষনের পর জাকিয়া সুলতানা রুপাকে হত্যা করে মধুপুর জঙ্গলে ফেলে দেয়। পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করে। পরদিন পত্রিাকায় ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা রুপাকে শনাক্ত করেন। এরপর আইনী জটিলতা শেষ করে বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুপুর কবরস্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যায় রূপার লাশ গ্রামের বাড়ী সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের আসানবাড়ীতে আনা হয়। এ সময় এলাকাবাসী লাশবাহী গাড়ী নিয়ে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে লাশ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হলে রুপাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য মা-বোনসহ স্বজনরা ছুটে আসে। কিন্তু লাশে পচন ধরায় কফিন খোলা সম্ভব হয় না। মাগরিবের নামাজ পর গ্রামেই জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযায় ঢাকা আদালতের সহকারী জজ হায়দার আলী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেনসহ শত শত গ্রামবাসী অংশগ্রহন করেন। জানাযায় দাঁড়িয়ে উপস্থিত ব্যক্তিরা বক্তব্যে খুনীদের ফাঁসির দাবী জানান।
রূপার কফিন আকড়ে ধরে মা হাসনা হেনা, বোন জিয়াসমিন ও মাশরুফা আকতার পপি বিলাপ বিলাপ করতে করতে বলেন, রুপার আশা ছিল বড় হয়ে মানুষের সেবা করবে। ভাই-বোনদের প্রতিষ্ঠিত করবে। কিন্তু নরপশুরা তাকে বাঁচতে দিলো না। শেষ বারের মতো মুখটাও দেখতে পারলাম। এ কষ্ট কিভাবে ভুলব? এ সময় স্বজনরা খুনীদের দৃষ্টান্তমুল ফাঁসি দাবী করেন। যাতে আর কোন মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়, এতো কষ্ট পেতে না হয়।
বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন বলেন, আইনী ফাঁক-ফোকর গলিয়ে খুনীরা যেতো পার না পায় সে জন্য সরকার, প্রশাসনসহ ও আইনজীবিদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়ার জোরদাবী জানান।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, সন্ধ্যার আগে লাশ গ্রামের বাড়ীতে পৌছে। এরপর জানাযা শেষে লাশ দাফন করা হয়। এছাড়া রুপার বাড়ীতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া এবং প্রাথমিকভাবে পরিবারটিকে দশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।