বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে (ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্বে প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদান করায় বাঙালি জাতি যখন গর্বিত, এই স্বীকৃতি প্রদান বাঙালি জাতি যখন উৎসবের সাথে পালন করছে ঠিক সেই সময়েই রাজধানীর কাওরান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ব্যানার গুলিতে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি কেটে ফেলা হয়েছে। বাঙ্গালী জাতি হিসেবে এ লজ্জা রাখি কোথায় ।
আজ রাত ১০টার দিকে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে গিয়ে এই কাটা ছবিগুলো দেখা যায়। কে বা কারা এই ঘৃণ্য কার্যসাধন করেছে তা এখনও জানা যায়নি। জাতির জনকের ভাষণ ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসেবে স্থান পাওয়া আন্তর্জাতিক মানের খ্যাতি, যা বাঙালি জাতির জন্য বিরাট অর্জন। কিন্তু এমন কার্যসাধন বাঙালি জাতির জন্য বিরাট লজ্জার, সমগ্র জাতির মাথা নিঁচু করে দেয়।
প্রজন্ম ‘৭১ এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর তাঁর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের স্বীকৃতিকে মেনে নিতে পারে নি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারাই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। সারা দেশ যখন এই উৎসব পালন করছে, গত সোমবার (১৩ নভেম্বর) শাহাবাগে ‘৭ই মার্চ উদযাপন কমিটি’র আয়োজনে যখন স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষ্যে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, আগামী ২৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের তথা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতর, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ ও বেসরকারি সংগঠনসমূহের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হবে তখনই এই রকম একটি ঘটনা ঘটলো। আমাদের এই ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে, প্রশাসনের আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আজকে চতুর্দিকে চক্রান্ত চলছে। সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে সম্মিলিতভাবে সেই চক্রান্ত মোকাবেলা করতে হবে।
গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধরী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আজকে সমগ্র পৃথিবী ৭ই মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর সাবেক ডাকসু ভিপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ১৩ নভেম্বরে শাহাবাগের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ বলেছেন অথচ একটি গোষ্ঠি স্বাধীনতা বা বঙ্গবন্ধু কোনটিকেই মেনে নিতে পারে নি। সেই সকল গোষ্ঠিই তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ইউনাইটেড নেশন এডুকেশন, সায়েন্টিফিক এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো) ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে (ওয়াল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্বে প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। প্যারিসে ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বুকোভা এক বিজ্ঞপ্তিতে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্বালাময়ী ওই ভাষণটিকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে ঘোষণা করেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রার স্মৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক তৈরি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের একটি তালিকা। আন্তর্জাতিকভাবে রেজিস্ট্রাকৃত এই তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যগত প্রামাণ্য দলিলসমূহের সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজারি কমিটি (আইএসি) কোনো প্রামাণ্য দলিল বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে রেজিস্ট্রার হবে কিনা বা যোগ্য কিনা তা বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। এই কমিটি এবছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর আয়োজিত সংগঠনটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রার্ড মেমোরি হিসেবে মনোনীত করে। বর্তমানে ম্যামোরি অফ ওয়াল্ড রেজিস্ট্রারে সব মহাদেশগুলো থেকে ৪২৭টি প্রামাণ্য দলিল ও সংগ্রহ তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাষণটি স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রস্তুতির দিকে ঝুঁকে পড়তেও উৎসাহিত করে। এটি মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান চলাকালে প্রচারে বাঙালী জাতির হৃদয় ও মনকে উৎসাহিত করে। এই ভাষণ এদেশের মানুষকে এবং পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে অনুপ্রাণিত করছে।