সর্বত্র
যখন মুজিব নিষিদ্ধ তখন বাংলা একাডেমীর কোন এক অনুষ্ঠানে ১৯৭৭ সালে কবি
নির্মলেন্দু গুণ সর্বপ্রথম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম
উচ্চারণ করার দু:সাহস দেখান। তার সেই বিখ্যাত কবিতা -“আমি আজ কারো রক্ত
চাইতে আসিনি।”
সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মতো আমিও পলাশ ফুল খুব ভালোবাসি, ‘সমকাল’ পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
শাহবাগ অ্যাভিন্যুর ঘূর্ণায়িত জলের ঝর্ণাটি আর্তস্বরে আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো সাক্ষী থাকুক,
না-ফোটা কৃষ্ণচূড়ার শুষ্ক-ভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জরীগুলো
কান পেতে শুনুক, আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক;
আমার পায়ের তলার পুণ্য মাটি ছুঁয়ে,
আমি আজ সেই গোলাপের কথা রাখলাম,
আমি আজ সেই পলাশের কথা রাখলাম,
আমি আজ সেই স্বপ্নের কথা রাখলাম।
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি,
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মতো আমিও পলাশ ফুল খুব ভালোবাসি, ‘সমকাল’ পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
শাহবাগ অ্যাভিন্যুর ঘূর্ণায়িত জলের ঝর্ণাটি আর্তস্বরে আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো সাক্ষী থাকুক,
না-ফোটা কৃষ্ণচূড়ার শুষ্ক-ভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জরীগুলো
কান পেতে শুনুক, আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক;
আমার পায়ের তলার পুণ্য মাটি ছুঁয়ে,
আমি আজ সেই গোলাপের কথা রাখলাম,
আমি আজ সেই পলাশের কথা রাখলাম,
আমি আজ সেই স্বপ্নের কথা রাখলাম।
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি,
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।
কবি নির্মলেন্দু গুণের জীবানী থেকেঃ
১৯৭৭ সালে, আমি লিখি
‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ কবিতাটি আমি পাঠ করি বাংলা একাডেমীতে
কবিতা পাঠের আসরে, ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে। অন্য কোনো জায়গায় কবিতা পড়ার কোনো সুযোগ তখন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে
এই প্রথম সরাসরি একটি কবিতা পড়লাম। তাঁর নাম কবিতাটিতে বার বার ফিরে
আসছিল। শ্রোতারা আনন্দে করতালি দিয়ে আমাকে স্বাগত জানাচ্ছিল। একটি ছেলে
উঠে এসে আমার গলায় একটি ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। তখন বাংলা একাডেমীর
মহাপরিচালক ছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী। তিনি কাঁপতে কাঁপতে আমার কাছে এসে বললেন,
‘তুমি আমার চাকরিটা খাইছ। চলো, এখন আমার রুমে বসে একটু চা খাবে।’ উত্তরে
রসিকতা করে আমি বলি, ‘স্যার, চাকরি চলে গেলেও বেতন আপনি ঠিকই পাবেন।’ তিনি
আমাকে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখি গোয়েন্দা সংস্থার
কয়েকজন কর্মকর্তা সাদা পোশাকে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। একজন বললেন, ‘কবি
সাহেব, আপনি তো সাংঘাতিক কবিতা লিখছেন। কপিটা দেন তো, দেখি।’ বললাম, ‘আমার
কাছে তো কবিতাটা নেই। অন্য এক লোক নিজেকে গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে কপিটা
নিয়ে গেছে।’ ওঁরা কথাটা বিশ্বাস করলেন। বললেন, ‘স্মৃতি থেকে কয়েকটা লাইন
বলেন।’ আমি বললাম, ‘আমার তো কবিতা মনে থাকে না। একটা লাইন শুধু মনে আছে,
“আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।” লাইনটি পাঁচবার আছে।’ ওখান
থেকে বেরিয়ে আসার পর ওঁরা আমাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যেতে চাইলেন। একদল
শ্রোতা তখন আমাকে ঘেরাও করে রাখল। আমি জানতে চাইলাম, ‘কেন যাব।’ ওঁরা আমাকে
বললেন, ‘আমাদের এসপি সাহেবের কাছে বসে একটু চা খাবেন।’ আমি বললাম, ‘আমি আর
কত চা খাব?’ আমাকে গ্রেপ্তার করলে তো যেতেই হবে। কিন্তু চা খেতে যেতে চাই
না।’ এক পর্যায়ে তাঁরা ওয়্যারলেসে কথা বললেন। তারপর আমাকে রেখে চলে
গেলেন।